ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল

একজন আদর্শ শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজ সংস্কারকের অপর নাম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার। তিনি ছিলেন একজন নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক। প্রতিবছর ২৩ জুলাই সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ নং সেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা, সাব-সেক্টর কমান্ডার, জেলা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা, দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, টাউনশ্রীপুর শরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও সখিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রয়াত ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের ২৭ তম মৃত্যুবাষির্কী টাউনশ্রীপুর শরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে বৃহষ্পতিবার।

প্রয়াত এই নেতার স্বরণে দেবহাটা টাউনশ্রীপুর শরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি ১৯৩৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি টাউন শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন বৃটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সাত জমিদারের বসতি ও বাংলাদেশের প্রথম পৌরসভা টাউনশ্রীপুর গ্রামের মুন্সী খিজির মিস্ত্রির পুত্র তিনি। তেরো ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র তিনিই বেঁচে ছিলেন। তার পিতা অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। ধর্ম পরায়ন ব্যক্তি হিসাবে এলাকায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ছোট বেলায় ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার হিন্দু জমিদার শাসিত টাউনশ্রীপুর প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর টাউনশ্রীপুর শরৎচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় মাতৃভাষা রক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। তিনি তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে নিজ বিদ্যালয়ে ৪০জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে জ্বালাময়ী বক্ততা দেওয়ার পর তিনি সকলের নজর কাড়েন। ১৯৫৪ সালে তিনি উক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে সাতক্ষীরা মহাকুমার একমাত্র কলেজে আইকম ক্লাসে শাহজাহান মাস্টার ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি আই.কম পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে কুষ্টিয়া ডিগ্রী কলেজ থেকে বি.কম পাশ করেন। একই বছরে সাতক্ষীরার পদ্মশাখরা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৫৯ সালে শ্যামনগর থানার ভেটখালী হাইস্কুলে একই পদে যোগদান করেন। সাথে সাথে ১৯৬২ সালে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড পাশ করেন এবং শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে টাউনশ্রীপুর ও সখিপুর হাইস্কুলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পদ্মশাখরা স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বকালীন সময়ে হাড়দ্দাহ নিবাসী মো. আজিজুর রহমানের কন্যা রাবেয়া খাতুন কে বিবাহ করেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তানী মিলিটারী পরিচালিত মুজাহীদ বাহিনীতে যোগদান করেন। তার দক্ষতার ফলে পাকিস্তান সরকার তাকে সাতক্ষীরা মহাকুমা মুজাহিদ বাহিনীর দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার তাকে ক্যাপ্টেন উপাধিতে ভূষিত করেন। একারণেই তিনি ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার নামে পরিচিত হন। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ রক্ষার্থে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তিনি স্থানীয় যুবকদের নিয়ে নিজ এলাকায় মুক্তি বাহিনী গঠন করেন। দেবহাটা থানায় পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে জয় বাংলার পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেন। বিওপির ৬ জন পাকিস্তানী ইপিআরদের বন্দী করে তাদের কাছ থেকে চায়না রাইফেল ছিনিয়ে নেন। যুদ্ধকালীন সময়ে ৯ নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্প টাউনশ্রীপুর হাইস্কুলে স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার ভরতের টাকীতে মুক্তি বাহিনীর প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করেন। যেটি শেষ পর্যন্ত নয় নম্বর সেক্টরের মর্যাদা পায়। একারণে তাকে নয় নম্বর সেক্টরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। দীর্ঘ নয় মাসে যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলার নিজ এলাকায় ফিরে এসে পুনরায় শিক্ষাকতায় যোগদেন। তিনি ইংরেজি ১৯৮৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে বাংলাদেশে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি দেবহাটার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে তিনি নিজের শরীরের মূল্যবান অংশ দুইটি চক্ষু রেজিস্ট্রির মাধ্যমে আই ব্যাংকে দান করেন। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই সখিপুর হাইস্কুলে ক্লাস নেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাথে সাথে তাকে সখিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে দুপুর ১২.৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পর দিন ২৪ জুলাই টাউনশ্রীপুর হাইস্কুল প্রাঙ্গনে বিকাল ৫ টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। তাকে স্মরণে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে ক্যাপ্টেন শাজাহান মাস্টার স্মৃতি সংরক্ষন কমিটি। বুধবার সন্ধ্যা ৭.৩০মিনিট থেকে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত, বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টায় আলোচনা সভা, দুপুর ১২.৩০ মিনিটে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান, বেলা ১ টায় মাজার জিয়ারত এবং বাদ আসর তবারক বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)