স্কুল-কলেজে পরীক্ষা ছাড়াই ছাত্রছাত্রীদের পাস ঘোষণা আসতে পারে

করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সাময়িক পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কলেজে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ছাড়াই পাস দেখিয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরীক্ষা ছাড়া স্কুল পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রথম সাময়িক, ৯ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে দ্বিতীয় সাময়িক এবং ২ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। আর ১৯ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পঞ্চমের সমাপনী পরীক্ষার সূচি রয়েছে।

কিন্তু করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিকের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এবারের এইচএসসি-সমমান পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তাও অনিশ্চিত। এ কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অটোমেটিক পাস করিয়েছেন। চলতি মাস থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করা হবে। তবে চলতি মাসে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাময়িক পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীদের পাস করানো হতে পারে। মাধ্যমিক পর্যায়েও এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।

jagonews24

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লা বলেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার চাইতে আমরা তাদের পড়ালেখাকে বেশি গুরুত্ব দেই। পরীক্ষা হচ্ছে কাগজে-কলমে একটি অধ্যায় মাত্র, তার চাইতে জরুরি শিক্ষার্থীর পড়ালেখা অব্যাহত রাখা। চলতি মাসের ওপর ভিত্তি করে সাময়িক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের যতটুকু পড়ানো সম্ভব হয়েছে তার ওপর লিখিত না মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে সেসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এসব সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হবে।

তিনি বলেন, আমরা সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন করাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, সাময়িক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলেও পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে। এ জন্য উত্তীর্ণ ক্লাসের সিলেবাসটা কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সংসদ টিভিতে শ্রেণি পাঠ সম্প্রচার করছি, আগামী সপ্তাহ থেকে রেডিওতে ক্লাস সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করা হবে, এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পাঠদান চালিয়ে রাখতে আমরা এসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তাই অভিভাবকরা তার সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। শিশুদের মনস্তান্তিক বিষয়টাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দেব। তাদের ওপর যাতে চাপ সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টাকে মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে সংসদ টিভিতে ক্লাস চললেও শুধু সেই ক্লাসের ওপর নির্ভর করে স্কুল পর্যায়ে পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করাটা তেমন যৌক্তিক নয় শিক্ষা প্রশাসনের কাছেই। কারণ, সংসদ টিভির ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সংসদ টিভির ক্লাসে অংশগ্রহণ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) একটি মাঠপর্যায়ের গবেষণায় দেখা গেছে, সারাদেশে সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থী এর আওতার বাইরে আছে। এর শতকরা হিসেবে ৭ ভাগের কম। আর এটা মূলত হাওর, চর ও পাহাড় এলাকার শিক্ষার্থীরাই বেশি।

এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সাম্প্রতিক গবেষণার জরিপে সংসদ টিভি বা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে না বলে উঠে এসেছে।

jagonews24

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাব ও অনলাইনে পাঠগ্রহণের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা মানিয়ে নিতে পারেনি ফলে মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে ‘ঘরে বসে শিখি’ ও ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ এই দুইটি অনুষ্ঠান দেখছে এবং ১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে। যারা টিভি ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে তারা আবার টেলিভিশনে ক্লাস অনুসরণ করাকে বেশ কঠিন বলে মনে করছে।

তাই সংখ্যার হিসেবে এটা খুব বেশি না হলে যারা ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি কিংবা ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারলেও শেখার বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এমন অবস্থায় এই প্রস্তুতি নিয়ে তারা পরীক্ষায় কিভাবে অংশগ্রহণ করবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, স্কুল পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ (সাময়িক) পরীক্ষা ছাড়া পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করার সময় এখনও আসেনি। আমরা অপেক্ষা করছি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমাদের হাতে এখনও পর্যাপ্ত সময় রয়েছে, পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ছাড়াও পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একাদশ শ্রেণির অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। একাদশ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের কখনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। প্রতিষ্ঠান চাইলে শিক্ষার্থীর এসাইন্টমেন্ট, ক্লাস মূল্যায়ন ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে যদি কলেজগুলোতে পরীক্ষা ছাড়া নিজেদের মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়, তবে শিক্ষা বোর্ডের কোনো বাধা-নিষেধ থাকবে না।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)