করোনার ছয় মাস: কোন ভ্যাকসিন কী অবস্থায় আছে
করোনাভাইরাস মহামারির ছয় মাস পার করল বিশ্ব। এ ভাইরাস যখন প্রবল গতিতে ছড়াচ্ছে, বিশ্ব তখন ভাইরাসটি প্রতিরোধে কার্যকর একটি ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার অপেক্ষায়। টিকা তৈরির বিভিন্ন গবেষণা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে গণমাধ্যমে আসছে অসংখ্য তথ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএচও) জানাচ্ছে, এখনো ১৩৫ রকমের করোনা ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার পথে। তার মধ্যে কিছু ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে মানুব দেহে, কিছুর ট্রায়াল হয়েছে পশুদের শরীরে। প্রিক্লিনিকাল স্টেজে রয়েছে প্রায় ১২৫ রকমের ভ্যাকসিন।
এখন দেখে নেয়া যাক করোনার কোন ধরনের ভ্যাকসিন কী অবস্থায় আছে—
জেনেটিক ভ্যাকসিন
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়াকে প্ররোচিত করতে করোনাভাইরাসের নিজস্ব এক বা একাধিক জিন ব্যবহার করে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার তৈরি এমআরএনএ ভ্যাকসিন। প্রথমবার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন ট্রায়াল করেছিল মডার্না। প্রথম পর্যায়ে দুই সন্তানের মা ৪৩ বছরের জেনিফার হ্যালারকে দেয়া হয়েছিল ভ্যাকসিন। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালও শেষ। জুলাইয়ে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে দেয়ার মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হবে। অক্সফোর্ডের পর দৌড়ে এগিয়ে এই ভ্যাকসিন।
জার্মান বায়োটেকনোলজি ফার্ম বায়োএনটেক এসই-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কোভিড ভ্যাকসিন বানাচ্ছে ফাইজার। আমেরিকাতেই ৩৬০ জনের উপরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফল সন্তোষজনক বলেই দাবি করেছেন ফাইজারের কর্ণধার অ্যালবার্ট বোরলা।
ডিএনএ ভ্যাকসিন বানাচ্ছে পেনসালিভানিয়ার বায়োটেক ফার্ম ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস। তাদের এই উদ্যোগে সামিল মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও। জোর প্রচেষ্টা চলছে ভ্যাকসিনটি বাজারে আনতে। সংস্থাটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের গবেষণাকে অনুমোদন করেছে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা আত্মপরিবর্ধনকারী আরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরি করছেন। ১৫ জুন থেকে ৩০০ মানুষকে নিয়ে ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। পরীক্ষা সফল হলে ছয় হাজার মানুষকে নিয়ে আগামী অক্টোবরে পরের ধাপের পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা আশা করছেন, আগামী বছরের শুরুতেই যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন দিতে পারবেন তারা।
ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন
এ ধরনের ভ্যাকসিন মূলত একটি ভাইরাস ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের জিন কোষে সরবরাহ করে এবং প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখাতে প্ররোচিত করে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃক তৈরি সিএইচএডিওএক্সওয়ান ভ্যাকসিনটি শিম্পাঞ্জি অ্যাডেনোভাইরাসভিত্তিক। এটির নাম দেয়া হয়েছে- AZD1222। ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। এতে আরো ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে যুক্ত করার কাজ চলছে।
চীনা সংস্থা ক্যানসিনো বায়োলজিক্স দেশটির একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজির অংশীদার হয়ে অ্যাড৫ নামে একটি অ্যাডেনোভাইরাসভিত্তিক ভ্যাকসিন পরীক্ষা করছে। মে মাসে তারা ল্যানসেটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল, প্রথমবারের মতো কোনো কোভিড–১৯ টি ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষার তথ্য বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করে তারা। বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে।
বায়োমেডিক্যাল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির যৌথ উদ্যোগে এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে জনসন অ্যান্ড জনসনের রিসার্চ উইং জ্যানসেন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। এ মাসে মানব দেহে ক্নিনিকাল ট্রায়াল শুরু হবে। এরইমধ্যে মার্কিন সরকারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে প্রায় ১০০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন।
প্রোটিনভিত্তিক ভ্যাকসিন
করোনাভাইরাস প্রোটিন বা প্রোটিন খণ্ড ব্যবহার করে ইমিউন বা প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া প্ররোচিত করতে পারে এ ধরনের ভ্যাকসিন। জিন থেরাপি ট্রিটমেন্টের উপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিন বানাচ্ছে সুইস বায়োটেক কোম্পানি নোভারটিস। অ্যাডেনোভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করে এই সংস্থাও ভেক্টর ভাইরাল ভ্যাকসিন তৈরি করছে। যদিও এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল এখনো পশুদের শরীরেই হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল হবে এ বছরের শেষের দিকে।
ক্লোভার বায়োফর্মাসিউটিক্যালস করোনাভাইরাস থেকে প্রোটিনযুক্ত একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও উদ্দীপিত করার জন্য ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের (জিএসকে) তৈরি অ্যাডজুভান্টের সঙ্গে এই টিকা নেয়া হবে।
সূএ-ডেইলি বাংলাদেশ