দেবহাটায় ভাবীকে চুলের মুঠি ধরে ঝাটা ও জুতাপেটা : পাল্টা মারপিটে সেই দেবর জখম
সাতক্ষীরার দেবহাটায় পারিবারিক কলহের জের ধরে শিশু সন্তানদের সামনেই পারুল পারভীন (৩৫) নামের এক গৃহবধুকে অর্ধনগ্ন করে চুরের মুঠি ধরে ঝাটা ও জুতা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে দেবর শহীদুল ইসলাম, স্বামী জহুরুল ইসলাম, চাচতো দেবর আসাদ ও জাকিরসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। পরে ওই গৃহবধূর স্বজনরা ঘটনাস্থলে গেলে মারপিট ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে গুরুতর জখম হয়েছেন ভাবীকে ঝাটা ও জুতাপেটা করা সেই দেবর শহীদুল ইসলাম।শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর হাজী কেয়ামদ্দীন মেমোরিয়াল মহিলা কলেজ সংলগ্ন ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ীতে। প্রথমে দুপুর ২টার দিকে শিশু সন্তানদের সামনে গৃহবধূ পারুলকে অর্ধনগ্ন করে চুলের মুঠি ধরে ঝাটা ও জুতা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে বাড়ীর গেইটে তালা লাগিয়ে দেয় দেবর শহীদুল ইসলাম, স্বামী জহুরুল ইসলাম, চাচতো দেবর আসাদ ও জাকিরসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে গৃহবধূ পারুলের দুই ভাই নাংলা গ্রামের মৃত আব্দুল গফফারের ছেলে রহমত আলী, আশিক হোসেন ও বোনের ছেলে খেজুর বাড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুলের ছেলে ইছাসহ নিকট আত্মীয় স্বজনরা শোনাবোঝার জন্য ঘটনাস্থলে গেলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারপিট ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় দেবর শহীদুল ইসলাম গুরুতর জখম হয়। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মারপিটের এ ঘটনায় গৃহবধূ পারুলসহ তার পরিবার ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজন একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন।
গৃহবধূ পারুল ও তার স্বজনসহ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিগত প্রায় দুই যুগ আগে পারুলের সাথে বিয়ে হয় সখিপুর হাজী কেয়ামউদ্দীন মেমোরিয়াল মহিলা কলেজ এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে জহুরুল ইসলামের। বর্তমানে তাদের সংসারে শোভা পারভীন (২০) নামের এক মেয়ে ও খালিদ হোসেন (৯) নামের এক ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোভাবে কাটতে থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে গৃহবধূ পারুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলতে থাকে স্বামী জহুরুল ইসলামসহ শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। বিগত প্রায় তিন মাস আগে জহুরুল ইসলাম কোর্ট থেকে একতরফাভাবে পারুলকে ডিভোর্স দিয়ে নোটিশ পাঠায়।কিন্তু পারুল সেই ডিভোর্সের নোটিশ গ্রহন না করে বরং সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে নির্যাতন সহ্য করে অদ্যবধি স্বামীর বাড়ীতে অবস্থানসহ সংসার করে আসছিলো। এরই মধ্যে ডির্ভোসের তিনমাস অতিবাহিত হওয়ায় পারুলকে বাড়ী থেকে বের করতে উঠেপড়ে লেগে যায় স্বামী জহুরুলসহ শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। সম্প্রতি তারা পারুলকে বাড়ী থেকে বের করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গন্যমান্য ব্যাক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়ীতে ধর্না দিতে থাকে। তবুও স্বামীর বাড়ী থেকে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন পারুল।শুক্রবার দুপুরে পারুলকে গালিগালাজসহ অর্ধনগ্ন করে চুলের মুঠি ধরে ঝাটা ও জুতা দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে দেবর শহীদুল ইসলাম, স্বামী জহুরুল ইসলাম, চাচতো দেবর আসাদ ও জাকিরসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। পরে দুই শিশুসন্তান সহ পারুলকে ঘর থেকে বাইরে বের করে দিয়ে বাড়ীর গেইটে তালা লাগিয়ে দেয় তারা। তখন থেকেই শিশুদের নিয়ে শ্বশুর বাড়ীর বাইরে বসেছিলো পারুল। এদিকে বোনকে মারপিট করে ঘর থেকে বের করে দেয়ার খবর পেয়ে শোনাবোঝার জন্য সন্ধ্যার পর পারুলের দুই ভাই রহমত আলী, আশিক হোসেন ও বোনের ছেলে ইছাসহ নিকট আত্মীয়রা তার শ্বশুর বাড়ীতে যায়।
একপর্যায়ে পারুলের আত্মীয় স্বজনদেরকেও মারতে দা, কুঁড়াল ও লাঠিশোঠা নিয়ে বের হয় তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। এসময় তাদের মারপিট ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পারুলকে ফেলেই প্রানে বাঁচতে সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসে পারুলের দুই ভাইসহ নিকট আত্মীয়রা। এরই মধ্যে হাত কেঁটে গিয়ে গুরুতর জখম হয় গহবধূ পারুলকে ঝাটা ও জুতাপেটা করা দেবর শহীদুল ইসলাম। পরে তাকে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ক্ষতস্থানে সেলাই ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আহত দেবর শহীদুল ইসলাম জানান, ভাবী পারুলকে মারপিটের পর তার দুই ভাই সহ আত্মীয়রা এসে শহীদুলকে মারপিটসহ তার হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপ দিয়েছে।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা জানান, ঘটনার পরপরই রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এ ব্যপারে এখনও কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান ওসি।