৪৯ বছরে বাজেটের আকার বাড়ছে ৭২২ গুণ

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে তার দ্বিতীয় এবং দেশের ৪৯তম বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হবে বাজেট অধিবেশন। এরপরপরই অর্থমন্ত্রী তার ব্রিফকেস খুলে বাজেট উপস্থাপন করা শুরু করবেন।

এবারের বাজেটে মহামারি কোভিড-১৯ রোধকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।

এক নজরে দেখে নেয়া যাক আজ বাজেটে কী কী থাকছে-

বাজেটের আকার:
২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য আজ ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। টাকার অংকে যা ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেশি।

উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।

ব্যয় প্রস্তাব:

পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে এই বাজেটে সরকার পরিচালন ব্যয় বাবদ খরচ ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ ইত্যাদি পরিচালন বাবদ মূলধন ব্যয় হিসেবে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। খাদ্য হিসাব বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৫৬৭ কোটি টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে ঋণ ও অগ্রিম (নিট) বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা।

উন্নয়ন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নিজস্ব উৎসের রাজস্ব থেকে অর্থায়নকৃত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি তথা স্কিম বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। এছাড়া এডিপি বহির্ভূত কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।

বাজেটের আয় প্রস্তাব:
বাজেটে আয়ের প্রধান উৎস হলো রাজস্ব আহরণ। বাজেটে রাজস্ব আহরণের টার্গেট ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া এই অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক অনুদান পাবে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সব মিলে সরকারের আয় হবে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আহরণ করবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত করসমূহ থেকে রাজস্বে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি:
এবার আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। এবার মোট বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এটি ৫ শতাংশ ধরা হতো। টাকার অংকে যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর ঘাটতি পুরণে সরকার বৈদিশিক নিট ঋণ নিতে চায় ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নিতে চায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

জিডিপি:
আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে টাকার অংকে সংশোধিত জিডিপির তুলনায় নতুন জিডিপি ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেশি। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

বিনিয়োগ বাড়াতে থাকছে যেসব ছাড়:

কমছে কর্পোরেট ট্যাক্স- বিনিয়োগ বাড়াতে দীর্ঘ ৫ বছর পর কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা, মোবাইল অপারেট ও সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট ট্যাক্স হার অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে করপোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়।

কমছে টার্নওভার ট্যাক্স- ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে বাজেটে টার্নওভার ট্যাক্সের হার কমানো হচ্ছে। এটি ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হচ্ছে। ভ্যাট অব্যাহতির সীমা আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা এবং টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা থাকছে। তবে সব শ্রেণির ব্যবসায় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

বাড়ছে করমুক্ত আয়ের সীমা- দীর্ঘ ৫ বছর পর ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। নারী, প্রতিবন্ধী ও গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যাহতির সীমাও আনুপাতিক হারে বাড়ছে। অন্যদিকে ব্যক্তি শ্রেণির কর হারও কমানো হচ্ছে। ব্যক্তি শ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে করের বোঝা কমবে। তবে অপরিবর্তিত থাকছে ন্যূনতম কর হার।

কর অবকাশ আওতা বাড়ছে- বাজেটে নতুন শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ফাইবার প্রোডাকশন, ন্যানো টেকনোলজি বেইজড প্রোডাক্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, অটোমোবাইল পার্টস, রোবোটিক ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার প্রোডাকশন, এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিস শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আগে ২৬টি শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)