দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কষ্টের ধান লোকসানে বিক্রি করছে কৃষক

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট’সহ ১০ জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। এখানে এখনো সরকারি ভাবে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়নি। তাই কৃষকরা কম দামে ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে তারা বহু কষ্টে উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তাছাড়া এ বছর বাগেরহাট জেলায় ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে  ২ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিকটন বোরোর আবাদ হবে বলে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি ভাবে ক্রয় করা হবে  ৬ হাজার ৪১৮ মেট্রিকটন । এ বছর চাষিদের ধানের উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।কৃষি বিভাগ বলছে, বাগেরহাটে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনার প্রভাবে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উপর নির্ভর করতে হবে। ইতিমধ্যে ভর্তুকি মূল্যে কিছু রিপার (ধান কাটার যন্ত্র) বিতরণ করা হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে সরকারি ভাবে ধান চাল সংগ্রহ শুরু হলেও এখানে এখনো উদ্বোধনের জন্য শুরু হয়নি। আগামী সোম অথবা মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে পারে বলে জানা যায়।

ধান চাষি নির্মল বাইন, বুদ্ধ বসু, সুরশাইল গ্রামের সুমন ফরাজী, কিশোর বিশ্বাস, কৃষ্ণ বিশ্বাস, খিলিগাতির সৈকত মন্ডল, শীরামপুরের সুবাস ভক্ত, পাটরপাড়ার হাসু বিশ্বাস ও খড়মখালীর পরিমল মজুমদারসহ অসংখ্য কৃষক  জানান, এ বছর তারা স্বতঃর্স্ফূতভাবে ধান চাষ করেছিলেন। অনেক আশা ছিল উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য পেলে তারা অর্থনৈতিক দৈন্যতা ঘোচাতে পারবেন। কিন্তু এ উপজেলায় সরকারিভাবে এখনো ধান কেনা শুরু হয়নি। ফলে কৃষকেরা নায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এখানে বর্তমানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা দরে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্যে রয়েছে এক হাজার ৪০ টাকা। প্রতিদিন একজন কিষাণের মজুরি দিতেই হয়েছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলায় ৬ লাখ ৮২ হাজার ৯৩৭ হেক্টর জমিতে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে মতে, বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় এবছর ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

ধান ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, আসলাম বিশ্বাস   জানান, এ জেলার উৎপাদিত ধান ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, মনিরামপুর, বসুন্দিয়া, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের রাইস মিলে বিক্রি হয়। মিল থেকে তারা যেমন দাম পান, কৃষকের কাছ থেকে সে রকম দামেই ধান কিনে থাকেন।

বাগেরহাট জেলা খাদ্য  নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার মুঠোফোনে জানান, ধান-চাল ক্রয়ের চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। এ বছর সরকারি ভাবে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা (প্রতি মণ ১০৪০ টাকা) ও প্রতি কেজি চালের দাম ৩৬ টাকা (প্রতি মন ১৪৪০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর বাগেরহাট  জেলার ৭ উপজেলা  কৃষকের কাছ থেকে ৬ হাজার ৪১৮ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হবে। ইতিমধ্যে লটারীর মাধ্যমে জেলার কৃষকদের তালিকা করা হবে। চিতলমারীর কৃষকদের প্রত্যেককে বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও কচুয়া উপজেলার খাদ্য গোডাউনে নিয়ে গিয়ে এ ধান বিক্রি করতে হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)