ইউরোপে বাড়ছে বাংলাদেশের বাইসাইকেলের চাহিদা
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যাতায়াতে ভিড় এড়াতে দ্বিচক্রযানকেই ভালো বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইউরোপের দেশগুলোর নাগরিকরা। এরইমধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে বাইসাইকেলের দোকানগুলো। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপে ব্যাপকভাবে চাহিদা বেড়েছে বাংলাদেশে তৈরি বাইসাইকেলের। আগে যেখানে দেশের চাহিদা মেটাতে বেশির ভাগ বাইসাইকেল আমদানি করতে হতো, সময়ের পরিবর্তনে এখন আন্তর্জাতিক মানসম্মত বাইসাইকেল রফতানি করছে বাংলাদেশ।
বাইসাইকেল রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। বরাবরই সেখানে গ্রীষ্মকালে বাইসাইকেলের চাহিদা বাড়ে। তাদের চাহিদার কারণে আশাবাদী বাংলাদেশের বাইসাইকেল রফতানিকারকরাও। এরইমধ্যে বেশ কিছু ক্রয়াদেশ এসেছে।
রফতানিকারকরা জানান, কোভিড-১৯ মহামারির পরে বাইসাইকেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বেশ কিছু অর্ডার এরইমধ্যে এসেছে। রফতানী উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাইসাইকেল রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১২৬ মিলিয়ন ডলার। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই আয় কিছুটা কমে যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউরোপে বাইসাইকেল রফতানি বেড়েছে ৯ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাইসাইকেল রফতানি হয়েছে ৮৪ মিলিয়ন ডলার। তবে চলতি অর্থবছরে এর রফতানি পরিমাণ অনেক বাড়বে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে সাইকেল রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই তালিকায় প্রথমে রয়েছে তাইওয়ান। আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কম্বোডিয়া। বাইসাইকেল মূলত যুক্তরাজ্য, জার্মানি, হল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, পর্তুগালে রফতানি হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তথ্য মতে, ২০১৬ সালে ২৮টি দেশ মোট ১ কোটি ৭০ লাখ বাইসাইকেল আমদানি করেছে।
৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাইওয়ানের অ্যালিটা বাংলাদেশ লিমিটেড স্বল্প পরিসরে বাইসাইকেল রফতানি শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় যুক্ত হয়-মেঘনা ও আরএফএল গ্রুপ। সেই সঙ্গে এইস বাইসাইকেল লিমিটেড, ট্রান্সওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল কোম্পানি, জার্মানি-বাংলাদেশ বাইসাইকেল, সিরাজ বাইসাইকেল লিমিটেড, নর্থ বেঙ্গল সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানও বাইসাইকেল উৎপাদন করছে।
অ্যালিটা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ লাখ পিস (৮ দশমিক ৪২ কোটি ডলার) বাইসাইকেল রফতানি করে। অ্যালিটা বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক এ এইচ এম ফেরদৌস বলেন, ইউরোপে দেশের তৈরি বাইসাইকেলের ভালো চাহিদা আছে। মানসম্মত ও পরিমিত দামে রফতানি করা হয় বলে চাহিদাও বেশি। পাশাপাশি, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ইউরোপের মানুষ আগামী দিনে শহরে চলাচলের জন্য বাইসাইকেল ব্যবহার করবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
মেঘনা গ্রুপের অপারেশন ডিরেক্টর মো. লুৎফুল বারী বলেন , ইউরোপে বাইসাইকেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পশ্চিমের দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব এই যানটি যাতায়াতে ভীড় এড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখবে।
আরেক বাইসাইকেল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আরএফএল গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা ২০১৫ সাল থেকেই সাইকেল রফতানি শুরু করেছি। বছরে এক লাখ বাইসাইকেল রফতানির মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে।
জয়নাল আবেদীন আরো বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সাইকেলের গ্রাহকরা অত্যন্ত সচেতন। আমরা তাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম হচ্ছি। পাশাপাশি, বড় বাজার বিশেষ করে আমেরিকা ও কানাডায় রফতানির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। জয়নাল আবেদীন আরো বলেন, এই বাজারগুলো ধরতে পারলে বছরে প্রায় ৮ লাখ বাইসাইকেল রফতানি করা সম্ভব হবে।