অক্সফোর্ডে করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে দুই বাঙালিকন্যা

বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত দুই লাখ ১৮ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। আক্রান্ত হয়েছে ৩১ লাখ ৩৮ হাজার। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে চীনে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস শনাক্তের চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও আবিষ্কার হয়নি প্রতিষেধক। এজন্য দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের সব বিজ্ঞানীরা।

বর্তমানে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য সারাবিশ্বে একশোর বেশি প্রজেক্টে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। কয়েকটি প্রতিষেধকের ক্লিনিকাল ট্রায়ালও শুরু হয়েছে। তবে এদের মধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। অক্সফোর্ডে যে দলটি কাজ করছে করোনার টিকা নিয়ে, সেখানেই কৃতিত্বের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে চলেছেন দুই বাঙালিকন্যা-সুমি বিশ্বাস এবং চন্দ্রা দত্ত।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের অধীনে করোনা প্রতিষেধক নিয়ে যে গবেষণা চলছে, সেই দলে রয়েছেন সুমি। আর চন্দ্রা কাজ করছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটির কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স ম্যানেজার হিসেবে। এই ফেসিলিটি থেকেই তৈরি হয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক চ্যাডক্স১।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে মানবশরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়েছে প্রতিষেধকটির। ইতোমধ্যেই যথেষ্ট আশা জাগিয়েছে এই প্রতিষেধক। বিজ্ঞানীদের বলছেন, প্রতিষেধকটির সফল হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত ৮০ শতাংশ।

sumi

সুমি বিশ্বাস

সারা গিলবার্টের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বিজ্ঞানীর দলে রয়েছেন সুমি। পেশায় ইমিউনোলজিস্ট সুমি ভারতের বেঙ্গালুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ইংল্যান্ড চলে যান। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনে বছরখানেক কাজ করার পরে যোগ দেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। এরপর ২০১৩ সালে জেনার ইনস্টিটিউটে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু করেন সুমি। এই মুহূর্তে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে জেনার ইনস্টিটিউটের গবেষণাদলের শীর্ষেও রয়েছেন এই বাঙালি মেয়ে। এছাড়া অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অন্তর্গত গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পাইবায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও কর্মরত ইমিউনোলজিস্ট সুমি।

dutta

চন্দ্রা দত্ত

কলকাতার টালিগঞ্জের গলফ গার্ডেনের মেয়ে চন্দ্রা। হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিতে বিটেক করার পর ২০০৯ সালে ব্রিটেনে চলে যান চন্দ্রা। লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োসায়েন্সে (বায়োটেকনোলজি) এমএসসি করেন। তারপর একাধিক দায়িত্বশীল পদে কাজ করেছেন তিনি।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটিতে যোগ দেয়ার পর ভ্যাকসিন তৈরির গুণগতমানের দিকটি নজরে রাখেন চন্দ্রা। যথাযথ পদ্ধতি এবং নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে কি-না, সবকিছু ঠিকমতো করা হয়েছে কি-না, অর্থাৎ কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্সের বিষয়টি সুনিশ্চিত করাই চন্দ্রার দায়িত্ব।

কতদিনে সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে এই ভ্যাকসিন-এমন প্রশ্নের উত্তরে চন্দ্রা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর ট্রায়াল শেষ হয়ে গেলেই বাজারে আসতে পারে এই ভ্যাকসিন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে অক্সফোর্ড ইউনিভারসিটির কোভিড–১৯ রোগের ২ কোটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে চায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। এই লক্ষ্যে আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদন শুরু করে দেবে তারা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অনেক বিদেশি সংস্থার মতো পুনের এই সংস্থাটিকে উৎপাদন প্রকল্পের অংশীদার বানিয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)