দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন

যতদূর চোখ যায় শুধু সোনালি ধানের শীষ। মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে আধা পাকা ধানের শীষের সমারোহ। কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলার স্বপ্নে এখন বিভোর কৃষক।দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট সহ ১০ জেলার উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। করোনা পরিস্থিতিতে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা। কারণ, করোনা আতঙ্কে বাগেরহাটে ও দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিক সংকট।

অপরদিকে রয়েছে কালবৈশাখীর ভয়। সঠিক সময় ধান না কাটতে পারলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। তাই ধান পেকে আসার সাথে সাথে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বোরো চাষিরা।কৃষি বিভাগ বলছে, বাগেরহাটে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনার প্রভাবে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উপর নির্ভর করতে হবে। ইতি মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে কিছু রিপার (ধান কাটার যন্ত্র) বিতরণ করা হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় এবছর ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৫০ হেক্টর, ফকিরহাটে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর, মোল্লাহাটে ৮ হাজার ৩২০ হেক্টর, রামপালে ৪ হাজার ৭৫ হেক্টর, কচুয়ায় ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর, মোরেলগঞ্জে ৫ হাজার২০ হেক্টর, চিতলমারী ১১ হাজার ৪৭০ হেক্টর, শরণখোলা ৮৫ হেক্টর, মোংলায় ৫ হেক্টর জমিতে ফসক। এর মধ্যে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রীড) এবং বাকী জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এবছর ২ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিকটন বোরোর আবাদ হবে বলে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলায় ৬ লাখ ৮২ হাজার ৯৩৭ হেক্টর জমিতে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলাওয়ারী রোপা ধান চাষ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে-যশোর জেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে ৩,৫২,৫৩৭ মেট্রিক টন, নড়াইল জেলায় ৩০ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে ৭৫ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন, ঝিনাইদহ জেলায় ৮৭ হাজার ৯২ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৩ মেট্রিক টন, মাগুরা জেলায় ৫০ হাজার ২২৬ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন, কুষ্টিয়া জেলায় ৭৫ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩২ হাজার ৯০ মেট্রিক টন, মেহেরপুর জেলায় ২৩ হাজার ৮০৪ হেক্টর জমিতে ৬৪ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪২ হাজার ৩৯১ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন, সাতীরা জেলায় ৯৮ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন, খুলনা জেলায় ৭৫ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন এবং এবছর ২ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিকটন বোরোর আবাদ হবে বলে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আবাদ কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। কৃষি ব্যাংকসহ সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক আবাদ কার্যক্রম সফল করতে কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় লোনের ব্যবস্থা করে রেখেছে।

বোরোর এই বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটলেও দেখা দিচ্ছে শ্রমিক সংকট। আকাশে একটু মেঘ দেখলেই চাষীদের চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। কিভাবে তারা সোনার ফসল ঘরে তুলবে।

ফকিরহাট উপজেলার অর্গানিক বেতাগা এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্ষেতে ভালো ধান হলেও করোনাভাইস ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া নিয়ে আমি শঙ্কিত।শ্রমিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। টাকা হলেও কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছে। জরুরী ভাবে ধান কাটার কৃষি যন্ত্র সরবরাহ না করলে ধান মাঠেই থেকে যাবে। যে কোন সময় ঝড় কিংবা শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দুশ্চিন্তা শেষ হবে না।
কৃষকরা জানান, এ বছর বোরো আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। ধানে পাকা রংও ধরছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই ধান কাটতে হবে। কিন্তু দুশ্চিন্তা ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাবে কিনা। এ মৌসুমে আগে বিভিন্ন  থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসতো। করোনার কারণে কেউই এবার আসতে পারছেন না তারা।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো: নাছরুল মিল্লাত মুঠোফোনে বলেন, ফকিরহাটে এবছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু হ্যান্ড রিপার বিতরণ শুরু হয়েছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক রঘুনাথ কর মুঠোফোনে জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত তদারকি এবং কৃষকদের আগ্রহে প্রতি বছর এ অঞ্চলে ইরি-বোরো ধান রোপণের সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় ১ লাখ কৃষক পরিবার। তাছাড়া কিছু শ্রমিক জেলার বাইরে থেকে এখানে এসে থাকে। শ্রমিক সংকটে যেন ধান কাটা কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় সেজন্য কিছু যন্ত্রপাতি বিতরণ শুরু হয়েছে। এই ধরা অব্যাহত রাখতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে ও পাট কাটার পর রোপা ও বোনা আমন ধান আবাদ করে থাকেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ অঞ্চলে উৎপাদিত ধান এলাকার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় রফতানী করা হয় বলে তিনি জানান।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)