ভয়ংকর আগুন থেকে সন্তানদের বাঁচিয়েও জেল হলো মায়ের

প্রতিটি মা-বাবার কাছে সব থেকে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সন্তান। কোনো প্রকার স্বার্থ ছাড়াই মা-বাবা তার সন্তানকে ভালোবেসে যান। সন্তানের সব থেকে বড় বিপদেও জীবনের পরোয়া না করে মা-বাবা ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিশেষভাবে এক্ষেত্রে মা হচ্ছে অতুলনীয়।

সন্তানকে বাঁচাতে মা সবার আগেই এগিয়ে আসেন। তা সে আগুন কিংবা পানি যাই হোক না কেন, মা কখনোই পিছিয়ে যায় না। তবে আগুন থেকে সন্তানকে বাঁচিয়ে মাকে জেলে যেতে হয়েছে এমন ঘটনা শুনেছেন কখনো? সত্যি অবাক করার মতো এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর কোরিয়ায়। আর জেলে যাওয়ার কারণটি জানলে আপনি আশ্চর্য না হয়ে পারবেন না!

বলা হয়ে থাকে, উত্তর কোরিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে নিভৃতচারী রাষ্ট্র। বিচিত্র সব আইন রয়েছে দেশটিতে। যা আইনগুলো সম্পর্কে শুনলে হতবাক হতে হয়! যেমন, উত্তর কোরিয়ার কোনো নাগরিক নিজের ইচ্ছায় চুল সাজাতে পারেন না। সরকার থেকে বেধে দেয়া নিয়মেই নাগরিকদের চুলের ফ্যাশন করতে হয়। এরকম হাজারো আইনে সাজানো দেশটির শাসন ব্যবস্থা। তবে আপনার-আমার কাছে আইনগুলো অবাক করা মনে হলেও, দেশটির জনগণের কাছে আইনগুলো অবশ্য পালনীয়।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ঘটনার বিবরণ। যা আবারো উত্তর কোরিয়ার শাসন ব্যবস্থাকে বর্হিবিশ্বে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর কোরিয়ার হ্যামগিয়ং প্রদেশে। সেখানে এক গ্রামে দুইটি পরিবার মিলেমিশে একটি বাড়িতে বাস করত। হঠাৎ আগুন লাগে বাড়িটিতে। মুহূর্তে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে বাড়ির বাসিন্দারা।

কিম জন উং এর ছবি

কিম জন উং এর ছবি

বাড়িতে ওই মুহূর্তে কোনো পুরুষ না-থাকায় এক নারী তড়িঘড়ি করে সন্তানদের আগুন থেকে রক্ষা করে। এছাড়া তিনি বাড়ির কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও রক্ষা করতে সক্ষম হন। জীবন বাজি রেখে সন্তানদের রক্ষা করার জন্য সবার বাহবা পেলেও এই নারীকে জেলে যেতে হয়েছে। কারণ উত্তর কোরিয়ার হাস্যকর আইন।

মা আগুন থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে পারলেও রক্ষা করতে পারেনি উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জন উং ও তার পরিবারবর্গের ছবি। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ছবিগুলো। এই লঘু কারণেই গুরু দণ্ড পেতে হয়েছে তাকে। কারণ উত্তর কোরিয়ার আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, প্রত্যেক নাগরিকের ঘরে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা ও তার পরিবারের ছবি রাখতে হবে। শুধু টানিয়ে রাখলেই হবে না। দুই বেলা নিয়ম করে ছবিগুলো পরিষ্কার করতে হবে। ছবিগুলোর এমনভাবে যত্ন নিতে হবে যেন দেখলে মনে হয় পরিবারের কোনো সদস্যের যত্ন নেয়া হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে ওই মা যদি সন্তানদের না বাঁচিয়ে ছবিগুলো আগুন থেকে রক্ষা করতে পারত তাহলে তাকে জেলে তো যেতে হতোই না, উল্টো সরকার থেকে পুরস্কার পেত। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ওই নারীকে শাস্তির পাশাপাশি তার পরিবার বর্গকেও শাস্তি পেতে হয়েছে। জানানো হয়েছে, আগুনে আংশিক পুড়ে যাওয়া সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি করতে দেয়া হবে না। দেয়া হবে না কোনো ধরনের প্রতিষেধক।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)