করোনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানালেন ১২টি মারাত্মক লক্ষণের কথা

কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস এখন এক ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে এক মহামারি রোগ হিসেবে আখ্যা পেয়েছে করোনা। এই ভাইরাসের সংক্রমণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এর লক্ষণ শুধু ঠাণ্ডা-জ্বরেই কিন্তু সীমাবদ্ধ নয় রয়েছে আরো উপসর্গ, এমনটিই জানিয়েছেন করোনাজয়ীরা।

বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৭৬ হাজার ১৭৯। মহামারি এই রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ হাজার ৪০৬ জন। তবে এখন পর্যন্ত ৯১ হাজার ৯১২ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।

সাইনাসের ব্যথা

ঠাণ্ডা বা ফ্লুর কারণে সাইনাসে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। তবে জানেন কি? করোনাভাইরাসের উপসর্গ হিসেবে সাইনাসের সমস্যা বাড়তে পারে। চীনের উহান শহরের এক বাসিন্দা কন্নর রিড ২০১৯ সালের নভেম্বরে করোনায় আক্রান্ত হন। তবে সৌভাগ্যবশত তিনি করোনাকে জয় করে সুস্থ আছেন। তিনি তার ডায়েরিতে সেসময় লিখেছিলেন, আমি সাইনাস ও মাথা ব্যথায় অসহ্য হয়ে যাচ্ছি, আমার চোখ ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করছে, এছাড়াও গলা ব্যথা আমাকে কাবু করেছে।’

কানে ব্যথা 

ঠাণ্ডা লাগলে বা টনসিলের সমস্যা থাকলে অনেকেরই কান ব্যথা হয়ে থাকে। তাতে বর্তমানে এই সমস্যাটি হলে কিন্তু হেলাফেলা করবেন না। কারণ এটিও হতে পারে করোনার উপসর্গ। উহানের কন্নর নামক ওই ব্যক্তি কানে ব্যথাও অনুভব করেছিলেন।

মাথা ব্যথা

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ওহিও হাসপাতালের বিছানায় মাথা ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন ক্যাভিন হ্যারিস। তার মাথা ব্যথার পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ স্কেলের মধ্যে ছিল। কতটা ব্যথা তিনি সহ্য করেছেন তা হয়ত আমি বা আপনি টের পাব না। তাই অসহ্যকর মাথা ব্যথা হলেও ঘরে বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ক্যাভিন জানান, করোনায় আক্রান্তদের মাথা ব্যথা কমাতে ইবুপ্রোফেন ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়েছিল।

চোখ ব্যথা ও জ্বালা-পোড়া ভাব

অ্যালার্জির কারনে অনেকেরই চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ব্যথা, চুলকানি ও জ্বালা-পোড়া হতেই পারে। তবে আপনি জানেন কি? করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিও এই সমস্যার সম্মুখীণ হতে পারে। উহানের কন্নর রিড এই সমস্যাটিতে বেশ কাতরাচ্ছিলেন। তিনি ঠিক মতো চোখ মেলতেও পারতেন না। মূলত এই সমস্যাটির কারণেই মাথা ব্যথা বেড়ে যায়।

গলা ব্যথা

বরাবরই করোনার লক্ষণ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়ে আসছে গলা ব্যথার কথা। এই লক্ষণটি প্রায় সব করোনা রোগীর মধ্যে পাওয়া গেছে। সেইসঙ্গে কাশির প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে। ইতালির এক রোগী অ্যান্ড্রু ও’ ডায়ের যখন করোনায় আক্রান্ত হন তখন তিনি তীব্র কাশি ও গলা ব্যথায় ভুগছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি কষ্টকর ছিল অনিয়ন্ত্রণযোগ্য কাশি।

শরীর ব্যথা

সামান্য জ্বর হলেও তো শরীর ব্যথা হয়েই থাকে, এ আর নতুন কী? এমনটি ভেবে করোনার লক্ষণকে কিন্তু হেলাফেলায় নিবেন না! করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর জ্বর-ঠাণ্ডার পাশাপাশি শরীর ব্যথাও বেড়ে যায়। সিয়াটলের বাসিন্দা এলিজাবেথ সেনিদার বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আমার শরীরে প্রথম লক্ষণ হিসেবে মাথা ও শরীর ব্যথার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর সঙ্গে উচ্চ মাত্রায় জ্বরও ছিল।

বুকের মধ্যে শব্দ

শ্বাস নেয়ার সময় যদি বুকের মধ্যে কোনো শব্দ টের পান তবে এখনই সতর্ক হন। এমন শব্দ মূলত নিউমোনিয়ার কারণ। এটি করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের রোদ ইসল্যান্ডের বাসিন্দা মার্ক থিবল্ট বলেন, শ্বাসকষ্টের ফলে আমি তখনই মারা যাব এমনটিই বোধ করেছিলাম।

ক্লান্তবোধ ও ক্ষুধা মন্দা

ঠাণ্ডা কাশির সমস্যায় নিস্তেজ হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক। থাইল্যান্ডের প্রথম করোনা রোগী জাইমুয়াই সা-উং বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আমি ক্লান্তবোধ করতাম। ক্ষুধাও লাগত না তেমন। তবে আমি প্রথমে সাধারণ ফ্লু হিসেবে বিষয়টি দেখেছিলাম। এতে করে আরো দেরি হয়ে গিয়েছিল। তবে এখন আমি সুস্থ।

জ্বর

করোনাভাইরাসের প্রথম লক্ষণ হিসেবে জ্বর হওয়ার বিষয়টি সবারই জানা। এই ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই জ্বর ব্যাতীত অন্য কোনো উপসর্গের সম্মুখীণ হননি বলেও জানা গেছে। দিল্লির প্রথম কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তি রোহিত দত্ত মাত্র একদিন জ্বরেই কাবু হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, যেদিন আমি ইতালি থেকে ফিরেছিলাম সেদিন জ্বর হয়। এর কিছুদিন পর আবারো উচ্চ মাত্রায় জ্বর হওয়ার পর করোনা টেস্টে পজেটিভ আসে।

বুকে ব্যথা

জ্বরের পাশপাশি এসময় বুকে ব্যথাও অনুভূত হতে পারে। মূলত করোনায় আক্রান্তরা কাশির সঙ্গে বুকে ব্যথা অনুভব করেছেন। সান্টা ক্লারিতার বাসিন্দা কার্ল গোল্ডম্যান বলেন, আমি বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেছিলাম। সঙ্গে কাশিও ছিল।

অনিদ্রা

লন্ডনের বাসিন্দা বিগ্রেট উইলকিনস সুস্থ হওয়ার পর বলেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে আমি যেদিন নিজ বাড়িতে ফিরেছিলাম সেদিন অনেক চেষ্টা করেও আমি ঘুমাতে পারিনি। আমার মধ্যে তখনো অন্য কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি, পরে অবশ্য জ্বর হয়। আমি সেদিন অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছিলাম না, খুবই অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল।

দমবন্ধ ভাব

নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল, ভাবছিলাম বোধ হয় এখনই মরে যাব। এমনটিই জানিয়েছিলেন অক্সফোর্ডশায়ারের স্যালি অ্যাবেল।

সূত্র: টাইমসঅবইন্ডিয়া

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)