দেবহাটায় হোম কোয়ারেন্টিনে ১৬০ : কন্ট্রোল রুম চালু ও সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি, নির্দেশ না মানলে শাস্তি, চায়ের দোকানে আড্ডা বন্ধ
দেবহাটায় এপর্যন্ত ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা ১৬০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধে গনসচেতনতা ও সরকারী নির্দেশ মেনে চলার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। একইসাথে সার্বক্ষনিক করোনা পরিস্থিতি মনিটরিং ও তথ্য আদান প্রদানের জন্য কন্ট্রোল রুম চালুসহ উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড ভিত্তিক মনিটরিং, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের আলাদা আলাদা টিম গঠন করেছে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া অমান্যসহ সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গণজমায়েত, দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি, গুজব সৃষ্টি করলে কঠোর শাস্তিমুলোক ব্যবস্থা গ্রহনের ঘোষনা দেয়ার পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপজেলার প্রত্যেক চায়ের দোকানে ক্যারাম বোর্ড খেলা, টিভি দেখা ও সব বয়সের মানুষদের আড্ডা দেয়ায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
রবিবার বেলা ১১ টায় করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধে উপজেলা কমিটির জরুরী সভায় সর্বশেষ তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা জারিসহ কন্ট্রোল রুম চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন। সভায় বক্তব্যকালে তিনি বলেন, কুলিয়া ইউনিয়নে ৫৯ জন, পারুলিয়া ইউনিয়নে ২১ জন, সখিপুর ইউনিয়নে ৩৪ জন, নওয়াপাড়া ইউনিয়নে ২৭ জন ও সদর ইউনিয়নে ১৯ জন মিলিয়ে সর্বমোট ১৬০ জনকে এপর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে থাকা সকলেই সাম্প্রতিক সময়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরবরাহকৃত বিদেশ ফেরতদের তালিকা ও স্ব স্ব ইউনিয়নের ওয়ার্ড ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে উক্ত ১৬০ জনকে বাছাই করে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
গনসচেতনতা সৃষ্টি ও সরকারী নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে সকলকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত সংক্রমন প্রতিরোধে বিদেশ ফেরত ব্যাক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করণের জন্য প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দায়িত্বরতরা বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যাক্তিদের সিল দিয়ে ট্যাগ করার পাশাপাশি সার্বক্ষনিক আপডেট তথ্য জমা করতে হবে। করোনা ভাইরাস মনিটরিংয়ের জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের ফোন নাম্বার- ০৪৭৩-২৭২০৭৪।
এছাড়া কন্ট্রোল রুম মনিটরিংয়ের জন্য কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মাদ তিতুমীরকে প্রধানসহ ৬ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। মনিটরিং টিমের অন্যান্যরা হলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি অফিসার ইউনুস আলী, আফজাল হোসেন, নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী জিএম আফতাব উদ্দীন ও অফিস সহায়ক আবুল হোসেন।
সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত মনিটরিং টিমের এসকল সদস্যদের মোবাইল নম্বর সমুহে (০১৯২৭-৩৬৭৪০২, ০১৭১৫-২৯২৬৭৪, ০১৭২০-৬৮৫৯৩৩, ০১৭৩৬৪৬০৩৭৪, ০১৭১৪-৫৭১০৬২, ০১৭১৩-৮১৯২৫৫) করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া বিকাল ৫টার পর থেকে অতি জরুরী বিষয়ে যেমন বিদেশ ফেরতদের তথ্য এবং হোম কোয়ারেন্টিন ও সরকারী নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিষয়ে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ব্যাক্তিগত মোবাইল নম্বর ০১৪০৯-১৭১৯৪৪ এ যোগাযোগ ও তথ্য দিতে পারবেন সকলে। তিনি আরো বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যাক্তিদের ট্যাগিং ও মনিটরিংয়ে কর্মরতদের সুরক্ষায় এ্যফ্রোন, মাস্ক, গাউন, হ্যান্ড গ্লোভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হবে। প্রত্যেক ইউনিয়ন কমিটির সাথে দুজন করে অফিসার রেখে কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। বিয়েসহ সকল ধরনের গনজমায়েতপুর্ন সামাজিক, সাংষ্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। চায়ের দোকানে আড্ডাবাজি, টিভি দেখা, ক্যারাম খেলাসহ রাত আটটার পর চায়ের দোকান বন্ধ রাখতে হবে।
প্রত্যেক পিতামাতাকে তাদের সন্তান ও বাড়ীর বয়ষ্ক ব্যাক্তিদের প্রতি নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যতটা সম্ভব শিশুদের খেলাধুলা বন্ধ করে বাড়ীতে বাচ্চাদের গল্প শোনানো বা খেলাধুলায় অভ্যস্ত করে রাখতে হবে। বিনা প্রয়োজনে ৫/৭ জন বা ততোধিক ব্যাক্তি একযায়গায় না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধে বিজিবি’কে অধিক সতর্কবস্থায় থাকতে হবে। ঋতু পরিবর্তন জণিত সর্দি-কাশিতে ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নেই। তবে এধরনের লক্ষন চলমান থাকার কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যাক্তিদের সংষ্পর্শে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, গলায় ব্যাথাসহ করোনা ভাইরাসের অন্যান্য লক্ষন দেখা দিলে অবশ্যই তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখার পাশাপাশি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, কোথাও সামাজিক ভাবে ভিড় জমানো যাবেনা। সকলকে সোশ্যাল গ্যাদারিং এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি বাড়ীর মহিলাদের বিনা প্রয়োজনে অন্যের বাড়ীতে যেয়ে গল্প করার অভ্যাস পরিহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন আরো বলেন, দেবহাটাতে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সকলে মিলে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধে কাজ করছেন। বিশেষ করে সাংবাদিকরা ঝুকিপুর্ন পেশায় নিয়োজিত থাকায় গণমাধ্যম কর্মীদের অবশ্যই মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শও দেন তিনি। অপরদিকে কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ, সরকারী নির্দেশ অমান্য ও দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করে তুললে মোবাইল কোর্টে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারী করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন।
সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, কুলিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ আব্দুল লতিফ, কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মাদ তিতুমীর, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শফিউল বসার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাই রকেটসহ সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।