যথাসময়ে এসএসসির ফল প্রকাশে অনিশ্চয়তা
করোভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রে মসজিদে জুমাসহ অন্যান্য নামাজ বন্ধ করেছে। এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে নানা ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বিভিন্ন দেশের সরকার। প্রাণঘাতি এ ভাইরাত ইতোমধ্যে বাংলাদেশে একজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রবাসীসহ ১৮জন।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে সদ্যসমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্রের ওএমআর শিট স্ক্যানিং স্থগিত করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ফলে যথাসময়ে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শুধু ঢাকা বোর্ড নয়, একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডও। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অবশ্য দাবি করছেনÑ আতঙ্ক কেটে গেলে ডাবল শিফটে কাজ করে এই গ্যাপ পূরণ করে নেয়া হবে। আশা করছি, এসএসসির ফল প্রকাশে কোনো বিলম্ব হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর প্রত্যেক সেক্টরেই নতুন করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রমও সীমিত করে আনা হচ্ছে। দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এসএসসি পরীক্ষার খাতার ওএমআর শিট স্ক্যানিং কার্যক্রম স্থগিত করেছে ঢাকা বোর্ড। একই সাথে মূল্যায়নকৃত খাতা নিয়ে বোর্ডে আসতেও পরীক্ষকদের নিষেধ করা হয়েছে।
এ দিকে ঢাকা বোর্ড সূত্র জানায়, দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা বোর্ড। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় উত্তরপত্রের ওএমআর শিট স্ক্যানিং স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আর উত্তরপত্র নিয়ে বোর্ডে আসতে নিষেধ করা হয়েছে পরীক্ষকদের। সূত্র আরো জানায়, শুধু ঢাকা বোর্ড নয়; এমন সিদ্ধান্ত পর্যায়ক্রমে সব ক’টি শিক্ষা বোর্ডই গ্রহণ করছে।
এসএসসির উত্তরপত্র মূল্যায়নের সাথে জড়িত সাভারের গুমাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিল্লুর রহমান জুলহাস জানান, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। এবার যেহেতু সারা দেশেই করোনাভাইরাসের সঙ্কট বিরাজ করছে এবং উত্তরপত্রের ওএমআর শিট স্ক্যানিংও স্থগিত করা হয়েছে তাই যথাসময়ে ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে একটি অনিশ্চয়তা রয়েই যায়। তার পরেও শিক্ষা বোর্ড এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নের সাথে জড়িতরা যদি আন্তরিকতার সাথে উদ্যোগী হন তাহলে হয়তো যথাসময়েই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হতে পারে। অন্যথায় বিলম্ব হওয়াটাই স্বাভাবিক।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক জানান, আমরা সাময়িকভাবে এসএসসির উত্তরপত্রের ওএমআর শিট স্ক্যানিং স্থগিত করলেও করোনা আতঙ্ক কেটে গেলে ডাবল শিফটে কাজ করে কাজের গ্যাপ পূরণ করে নেব। আর এতে আশা করছি, ফলাফল প্রকাশে কোনো বিলম্ব হবে না।
উল্লেখ্য, গত ২৭ ফেব্রয়ারি শেষ হয়েছে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের লিখিত পরীক্ষা। আর গত ১ মার্চ দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। আর ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। আর ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চের মধ্যে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
চলতি বছর ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। গত বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ জন। মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বছর ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ২৪০ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি, দুই লাখ ৮১ হাজার ২৫৪ জন পরীক্ষার্থী দাখিল এবং এক লাখ ৩১ হাজার ২৮৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।
নিয়মমতো পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিন বা দুই মাসের মধ্যে রেজাল্ট হওয়ার কথা। সেই হিসাবে এপ্রিলের ২৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যেই সাধারণত এসএসসির রেজাল্ট প্রকাশ হয়। তবে এ বছর যেহেতু উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও বোর্ডের তাদের নিজস্ব কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করেছে সে কারনে হয়তো এবার এই রেজাল্ট প্রকাশ মে মাসের মাঝামাঝি অথবা শেষভাগে চলে যেতে পারে।
সূএ-বাংলাদেশ টুডে