৩৯ বছর আগের যে বইতে লেখা করোনাভাইরাসের রহস্য ও পূর্বাভাস
চীনের উহান প্রদেশে একটি গুপ্ত মিলিটারি ল্যাবে উৎপাদন করা হয়েছে ভয়ংকর এক ভাইরাস। যা চাইনিজ মিলিটারিরা যুদ্ধের সময় বায়োলজিক্যাল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য খুবই শক্তিশালীভাবে সংরক্ষিত করে রেখেছে। মিলিটারি ল্যাবের বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির নাম দিয়েছে উহান-৪০০।
১৯৮১ সালে প্রকাশিত আমেরিকান লেখক ডিন কুনজ এর লেখা ‘দ্য আইস অব ডার্কনেস’ বইতে এরকমভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। ৩১২ পৃষ্ঠার বইটি ১৯৮১ সালের ১২ মে প্রকাশ করে পকেট বুক পাবলিশার্স। বর্তমান সময়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা পৃথিবীব্যাপী মাত্র কয়েক মাসে ৭ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুর ফলে ‘দ্য আইস অব ডার্কনেস’ বইটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সারা ইউরোপ জুড়ে বইটি হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার ওই পাড়ায় খুলে গিয়েছে এক অদ্ভুত রহস্যের জাল।
বইটি আবর্তিত হয়েছে ক্রিস্টিনা ইভানস নামের একজন মায়ের অনুসন্ধানী গল্পের মাধ্যমে। ক্রিস্টিনা ইভানসের ছেলে ড্যানি উহানের একটি পাহাড়ের পাদদেশে একটি পর্যটক দলের সাথে ক্যাম্পিংয়ে যায়। যেখানে সে বিগত বছরগুলোতে ১৬ বার ক্যাম্পিংয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষবারের ক্যাম্পিংয়ে ঘটে বিপত্তি। ক্যাম্পিংয়ের সদস্যরা সামান্য একটু অসুস্থ হয়েই কোনো প্রকার ব্যাখ্যা ছাড়াই একে একে মারা যেতে থাকে। ক্যাম্পিংয়ের লিডার, ড্রাইভার এমনকি ড্যানিও উহানের ওই ক্যাম্পিংয়ে মারা যায় কোনোরকম স্বাভাবিক ব্যাখা ছাড়াই।
ড্যানির মা ক্রিস্টিনা ইভানস ছেলের এরকম নীরবে-নিভৃতে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেন নি। তার বিশ্বাস ছেলে হয়তো এখনো বেঁচে আছে। এই আশাটুকুকে ভরসা করেই তিনি নামেন অনুসন্ধানে। একে একে খুলতে থাকে অদ্ভুত রহস্যের জাল। উহানে তিনি খোঁজ পান একটি মিলিটারি ল্যাবের। যেখানে খুবই গোপনীয়তার সাথে উৎপাদন করা হয় যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য ভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী সব বায়োলজিক্যাল অস্ত্র।
সেই ল্যাব থেকে ছড়ানো ভাইরাস উহান-৪০০ তে আক্রান্ত হয়েছিল তার একমাত্র সন্তান ড্যানি। তাইতো সামান্য একটু অসুস্থ হয়েই ক্যাম্পিং দলের সবার সাথে মৃত্যুবরণ করেছে সেও কোনো প্রকার ব্যাখা ছাড়াই।
ডিন কুনজের এই বইটির ৩১২ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালের দিকে বিশ্বব্যাপী একটি ভয়াবহ নিউমোনিয়া ধরনের অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়বে। সেটি শ্বাসযন্ত্র, শ্বাসনালী সংশ্লিষ্ট টিউবে আক্রমণ করবে সম্ভাব্য সব ধরনের চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও। অসুস্থতার চেয়েও সবচেয়ে হতবুদ্ধির বিষয় হবে যতটা আকস্মিক রোগটি আসবে ততটা আকস্মিকই সেটা নির্মূলও হয়ে যাবে। দশ বছর পরে সেটি আবার আক্রমণ করবে। তারপরে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হবে।
পুরোনো সেই বইতে লেখা তথ্যের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের অবস্থা।
নতুন করোনা ভাইরাসের আরেক নাম কোভিড-১৯। এই রোগটিকে এখন বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ভাইরাসটি সম্পর্কে পূর্বে বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল। এর মধ্যেই চীনে অনেক মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করেছে এবং বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে খুবই দ্রুত গতিতে। আক্রান্ত হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় সারা পৃথিবীতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৭০০০ সংখ্যাটিকে।
করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে এমন ৬টি করোনা ভাইরাস এতদিন পরিচিত ছিল। কোভিড-১৯ এ তালিকায় নতুন।
২০০২ সালে চীন থেকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)। সেই ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস।
পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন সময়ে হানা দিয়েছে বিভিন্ন রকমের ভাইরাস। অনেক চেষ্টা এবং পরিশ্রমের পর মানুষ সেই সব ভাইরাসের প্রতিষেধকও আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু যদি ‘দ্য আইস অব ডার্কনেস’ বইটির তথ্য সত্য প্রমাণিত হয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় ভাইরাস উৎপাদন করার কোনো সামরিক ল্যাবরেটরি। তবে তা হবে মানব সভ্যতা ধ্বংসের জন্য সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।
সূএ-বাংলাদেশ টুডে