বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের মহিমায় বাংলাদেশকে চিনে নিয়েছে বিশ্ব : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। তার ত্যাগের মহিমায় বাংলাদেশকে চিনে নিয়েছে বিশ্ব।

মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জন্মশতবার্ষিকী’র বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

ভাষণের শুরুতেই সবাইকে মুজিববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। শুভেচ্ছা জানান বিশ্ববাসীসহ, দেশে ও দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশের সব নাগরিককে। ছোট বোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বক্তব্য শেষে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদ্যাপনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে মুজিববর্ষের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুজিববর্ষের মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের শহীদদের। স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে। নির্যাতিত মা-বোন এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সালাম জানান মুক্তিযোদ্ধাদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তবে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা মুজিববর্ষ উদ্যাপন করব। একই কারণে বিদেশি অতিথিদের সফর স্থগিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভুটানের মহামান্য রাজা জিগমে খেসার নমগেয়েল ওয়াংচুক, নেপালের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিনসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষী ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমি তাদের ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আজ (মঙ্গলবার) ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের আজকের দিনে এই বাংলায় জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা। দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন আজীবন। বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাকে ব্যথিত করত। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভ‚মির বঙ্গসন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন- তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদ্যাপন করা হবে। ২০২১ সালে উদ্যাপিত হবে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশ, ইউনেসকো, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মুজিববর্ষ উদ্যাপনে অংশীদার হয়েছে। এ সময় তিনি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুজিববর্ষ পালনের সুযোগ পেয়েছি। এই যে আমাদের জীবনে কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি, যারা আমার দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরপর তিনবার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মুজিববর্ষ উদ্যাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতার কথা বর্ণনা করে তার জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হতেন জাতির পিতা। অকাতরে বিলিয়ে দিতেন তার জামাকাপড়, বই, ছাতা। যার যখন যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাকে নিজের জিনিস দিয়ে দিতেন। নিজের খাবারও তিনি ভাগ করে খেতেন। দুর্ভিক্ষের সময় গোলার ধান বিলিয়ে দিতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই তিনি আনন্দ পেতেন। নিজের জীবনে কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের উন্নত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তার সে ত্যাগ বৃথা যায়নি। আজ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমরা দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসবে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে তোমাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

পিতার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পিতা, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে তোমাকে। তোমার দেহ রক্তাক্ত করেছে। তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের অন্বেষণে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতা, তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকারÑ তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়। তুমি ঘুমিয়ে আছ টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা জেগে রইবো তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এ দেশের মানুষ- প্রজন্মের পর প্রজন্ম। তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে, তোমার দেয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন। এ সময় তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ভাষায় বলেন, তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি/তোমার সেবার মহৎ প্রয়াস সহিবারে দাও ভকতি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)