মুজিববর্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন
মুজিববর্ষে মানবিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। আজ মঙ্গলবার সকালে ডাকযোগে আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই আবেদন পাঠান।
এ বিষয়ে ড. ইউনূস আলী আকন্দ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি কোনো দলের পক্ষে নয়, বরং ১৬ কোটি মানুষের পক্ষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে মুজিববর্ষে ১৭ মার্চ মানবিক কারণে সংবিধানের প্রস্তাবনা, ১১, ৪৮(৩), ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন করেছি। আবেদনের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র ও আইন সচিবকেও পাঠানো হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দল ও পরিবারের সদস্যরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে তাতে অনুমতি মেলেনি।
সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আবার খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। তবে সম্মতি দিলে দ্রুত তাঁকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা দিতে হবে এবং মেডিক্যাল বোর্ড চাইলে নতুন চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মওদুদ আহমদ।
অপর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডনে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আদালত তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন চেয়ে এর আগেও হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত—এমন তিন বিবেচনায় হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ৩১ জুলাই সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন। আপিল বিভাগের ওই রায়ে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মতি থাকলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে দ্রুত ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে।
সেই রায় ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টে নতুন করে জামিন আবেদন করার উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর সাজা হয়। বর্তমানে তিনি কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন।
পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তাঁর আইনজীবীরা।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
দণ্ডাদেশ পাওয়া অপর তিন আসামি হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।