এবার মৃত্যুঝুঁকি বাড়াবে ডেঙ্গু

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত না হওয়া দেশগুলোও এ ভাইরাসের আতঙ্কে আছে। এর সংক্রমণ প্রতিরোধে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এই করোনার সঙ্গে নতুন আতঙ্ক এবার সামনে এলো। তা হলো- আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

গত দুদিন (৪ মার্চ সকালে ও আজ ৫ মার্চ রাতে) ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়।রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সুপ্ত লার্ভা থেকে এডিস মশার উৎপত্তি হয়। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এখন থেকেই এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে না পারলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে।

৪ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু মশার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সবার মুখেই ঘুরে-ফিরে করোনাভাইরাসের পাশাপাশি মার্চ থেকেই ডেঙ্গু মশার প্রকোপের বিষয়ে কথা ছিল। তারা ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অধিকাংশ বক্তা বলেন, ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটানোর চেয়ে প্রজননস্থল ধ্বংস করা বেশি প্রয়োজন।

গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভিড় জমে হাসপাতালে। এমনকি এভাবে হাসপাতালের বেঝেতেও রোগীদের দেখা যায়

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গতবছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যদি কম হয় তারপরও মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকবে। কারণ, গতবছর যারা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল ওসব রোগী যদি ফের ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকবে।’

তিনি এখন থেকেই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনায় মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।

ওই সভায় উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে শুধু শহরই নয়, গ্রামেও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। গতবছর শহরের পাশাপাশি গ্রামে প্রায় সমসংখ্যক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল।

তিনি বলেন, মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ প্রতিটি ভাঙা পাত্রের জন্য চেয়ারম্যান মেম্বাররা ২-৪ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করতে পারেন।

ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ভর্তি এই শিশুর যত্ন নিচ্ছিলেন তার মা

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উপস্থিত সবাইকে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগ্রহণের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের পাশাপাশি ডেঙ্গু মশার প্রকোপরোধে সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) হিসাবে গত বছর (২০১৯) সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে লক্ষাধিক রোগী ভর্তি হন। বিভিন্ন হাসপাতালে ২৬৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে দেড় শতাধিক মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয় বলে নিশ্চিত করা হয়।

এর আগে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ২০০০ সালে, ৯৩ জন। ওই বছরই রোগটি প্রথম ভয়াবহ আকার নেয়, আক্রান্ত হয় ৫ হাজার ৫৫১ জন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)