বিশে বিশ্বকাপ জিতলো বাংলাদেশ
অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি গড়লো বাংলাদেশ। ডার্ক ওয়ার্থ লুইস মেথডে ১৭০ রানের লক্ষ্য ৭ উইকেট হারিয়ে পেরিয়ে যায় আকবর আলীর দল। আগে ব্যাট করে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান তোলে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত।
বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করেন পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হোসেন তামিম। কার্তিক ত্যাগীর প্রথম ওভার থেকে ১৩ রান তুলে দারুণ শুরুর সম্ভাবনা জাগান দুই তরুণ তুর্কী।
ভারতের বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ৮.২ ওভারে দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করেন তারা। তবে ৫০ স্পর্শ করার পরপরই বিদায় নেন তামিম। ২৫ বলে ১৭ রান করেন তিনি।
নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি আগের ম্যাচে শতক হাঁকানো মাহমুদুল হাসান জয়। দলীয় ৬২ রানের মাথায় রবি বিষ্ণয় এর দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন জয়। ১২ বলে ৮ রান করেন জয়। জয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাঠ ছাড়েন ওপেনার ইমনও। ৪২ বলে ২৫ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
এর পরপরই তৌহিদ হৃদয় (০) ও শাহাদাত হোসেনকেও (১) সাজঘরে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন রবি। আশা দেখাচ্ছিলেন শামীম হোসেন। কিন্তু দলীয় ৮৫ রানের মাথায় তাকে ফিরিয়ে টাইগার শিবিরে আঘাত হানেন সুশান্ত মিশ্র। ১৮ বলে ৭ রান করেন তিনি।
অভিষেক দাসকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের রান ১০০ পার করেন আকবর আলী। ৭ বলে ৫ রান করা অভিষেককে ফিরিয়ে বাংলােদেশকে চাপে ফেলে দেন মিশ্র।
এরপরই অধিনায়ক আকবর আলীর সঙ্গে ব্যাটিংয়ে যোগ দেন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে উঠে যাওয়া ইমন। তাদের ব্যাটে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ।
দলীয় ১৪৩ রানের মাথায় যশস্বীর বলে আকাশ সিংহের হাতে ধরা পড়েন ইমন। ৭৯ বলে ৪৭ রান করেন তিনি। রাকিবুল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান দলপতি আকবর আলী।
জয়ের জন্য যখন ৯ ওভারে মাত্র ১৩ রান দরকার তখনই বৃষ্টি আঘাত হানে। পরবর্তীতে খেলা শুরু হলে নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৬ ওভারে ১৭০ রান। সে লক্ষ্য সহজেই পেরিয়ে যায় টাইগার যুবারা। ৩ উইকেট ও ২৩ বল হাতে রেখে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয় আকবর আলীর দল।
৭৭ বলে ৪৩ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেন দলপতি আকবর আলী। ৪টি চার ও ১টি ছয়ের মারে সাজানো ছিলো তার ইনিংসটি। অপরপ্রান্তে ২৫ বলে ৯ রানে অপরাজিত থেকে আকবরকে যোগ্য সাহচর্য দেন রাকিবুল হাসান।
ভারতের সফলতম বোলার রবি বিষ্ণয় ১০ ওভারে ৩০ রান খরচায় নেন ৪ উইকেট।
এর আগে, টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। দলীয় ৯ রানের মাথায় ওপেনার দিব্যংশ সাক্সেনাকে (২) সাজঘরে ফেরান অভিষেক দাস। ওয়ান ডাউনে নামা তিলক ভার্মাকে নিয়ে ভারতকে এগিয়ে নিতে থাকেন আরেক ওপেনার যশস্বী জসওয়াল।
ইনিংসের ২৯তম ওভারের শেষ বলে সাকিবের বলে বাউন্ডারি লাইনে শরিফুল ইসলামের হাতে ধরা পড়েন ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা তিলক ভার্মা। ৬৫ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নতুন ব্যাটসম্যান প্রিয়ম গর্গ। ৯ বলে ৭ রান করে রাকিবুলের বলে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন প্রিয়ম।
১১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া ভারতকে টেনে তোলেন যশস্বী। কিন্তু তার আক্রমণ থামান শরিফুল ইসলাম। ১২১ বলে ৮৮ রান করে শরিফুলের বলে তানজিদ হাসানের হাতে ধরা পড়েন যশস্বী। পরের সিদ্ধেশ বীরের (০) উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন শরিফুল।
যশস্বীর বিদায়ের পর আর কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি ভারতের যুবারা। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ। ২১ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে ভারত।
৯ ওভারে ৪০ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার অভিষেক দাস। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব।