আশাশুনিতে মালিকানা দেখিয়ে মিথ্যা মামলায় সাংবাদিক জেলে,আদালতে কাগজপত্রের সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ
আশাশুনিতে শুকনা মৎস্য ঘেরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লাখ টাকার মাছ লুটের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সাংবাদিক ফায়জুল কবীরকে হাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা সপ্তাহ না পেরুতেই এসংক্রান্ত অবাক করা কিছু তথ্য সামনে বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় ভূমিহীন, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও আদালতের কাগজপত্র দৃষ্টে জানাগেছে, সাংবাদিক ফায়জুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী কালিগঞ্জ থানার কালিকাপুর গ্রামের সাইফুল্লাহ বাহার থানায় লিখিত অভিযোগে বলেছেন, আশাশুনির লাঙ্গলদাড়িয়া মৌজায় ৯৪ নং খতিয়ানের ৪৫৫ ও ৪৫৬ নং দাগে ৪.৫২ একর সম্পত্তি ক্রয়সূত্রে মালিক তার পিতা সমশের আলী গাজী ও চাচা দাউদ আলী গাজী।
তাদের অন্যান্য জমিসহ শেয়ারে সাত্তার মোড়লের বিসমিল্লাহ-১ নামক মৎস্য ঘেরে মাছ চাষ করে আসছেন। বাদী সাইফুল্লাহ বাহারের বর্ণনা মতে উক্ত জমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। কিন্তু সাতক্ষীরা যুগ্ম-জেলা জজ ২য় বিজ্ঞ আদালতে তার বাবা সমশের গাজী বনাম রাষ্ট্রপক্ষ’র মামলার শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক মো. ফারুক ইকবালের রায়ে দেওয়ানী ৬১/১৫ নং মামলায় দরখাস্তকারী সমশের গং বলেন, নালিশী জমি ৪৪৪৬৩/৬০-৬১নং সার্টিফিকেট কেসে ৪/১০/৬০ নিলাম খরিদ করে ১০/৮/৬১ তারিখে দখলপ্রাপ্ত হয়ে ভোগদখলে আছেন। অপরদিকে, মামলার আরজিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলছেন নিলাম সংক্রান্ত বাদীর সকল কাগজপত্র জাল।
উক্ত জমির বৈধ মালিক না থাকায় সরকার ২/১৪-১৫ নং মিস কেসে স্থানীয় ভূমিহীনদের মধ্যে (মিথ্যা মামলার ৬-১৪ বিবাদী) ইজারা প্রদান করেন এবং তারা দখলে আছেন। মামলার ৬-১৪ নং বিবাদীর দাবি, সমশের গাজী গং এসএ ৯৩ নং খতিয়ানে নিলামে খরিদ করেছেন মর্মে ৮০/০২ নং দেওয়ানি মামলায় সরকার পক্ষ উক্ত নিলামের কাগজপত্র জাল দাবি করলে বাদী পক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় মামলা খারিজ হয়ে যায়। এরপরেও উক্ত সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য একাধিক জায়গায় মামলা দায়ের করেন সমশের গং।
উক্ত সম্পত্তির নিলাম সংক্রান্ত বাদীপক্ষের দাখিলকৃত কাগজ পর্যালোচনা করে বিজ্ঞ আদালত দেখেন, ১০/০৩/১৯৬৩ তারিখে উক্ত সার্টিফাইড কপি হাতে পাওয়ার পরও সমশের গংয়ের নামে নামপত্তন হয়নি, খাজনা দাখিল করেননি এবং তাদের নামে হাল জরিপেও রেকর্ড হয়নি। তারা মামলা দায়ের করেছেন ২০১৫ সালে। কিন্তু এতদিনেও কেন নামপত্তন ও খাজনা দিলেন না, কেন তারা (সমশের গং) এ বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি? দালিলীকভাবে বাদীপক্ষের নামে দখল থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি এবং বাদী পক্ষের দাখিলীয় নিলামের কাগজপত্রের সত্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ।
বাদী পক্ষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিলামের বুনিয়াদে উক্ত সম্পত্তি দাবী করায় দাবীকৃত নিলামের অস্তিত্ব আছে বলে প্রতীয়মান হয়না। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনায় বাদীপক্ষ সমশের গংয়ের অনুকূলে প্রাইমাফেসী কেস প্রতীয়মান না হওয়ায় ৬-১৪ নং বিবাদীদের নামীয় ইজারার কার্যক্রম স্থগিত রাখা সংক্রান্ত ১৫১ ধারার দরখাস্ত না-মঞ্জুর করা হল। উক্ত সম্পত্তির বিষয়ে শ্রীউলা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মহাসিন আলি জানান, মালিক বিহীন উক্ত নালিশী সম্পত্তি থেকে মেহেরুন্নেছা, মনোয়ারা, হাছিনা, রাজিয়াসহ ৯ জন ভূমিহীনকে ৫০ শতক করে সরকারী সম্পত্তি ইজারা দেওয়া হয়েছে।
যারা ৬১/১৫ নং মামলায় ৬-১৪ নং বিবাদী। তাদের পক্ষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে বলে তিনি জানান। জমি দখল ও প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে সমশের গাজীর পক্ষে তার ছেলে সাইফুল্লাহ বাহার নালিশী সম্পত্তি পৈত্রিক দাবী করে আাশাশুনি থানায় সাংবাদিক ফায়জুল কবীরসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, তাকে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করে লক্ষাধিক টাকার মাছ লুট করা হয়েছে বলে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীনরা ২০১৫ সাল থেকে ওই জমি ইজারাপ্রাপ্ত হয়ে ভোগদখলে থাকেন। গত ৩১ জানুয়ারি সকালে ভূমিহীনরা তাদের জমি পানিশূন্য থাকায় বিসমিল্লাহ-১ নামক ঘের থেকে আলাদা করে নিজেদের সম্পত্তিতে বেড়ীবাঁধ দিয়ে বাসা তৈরি করে থাকা খাওয়া শুরু করেন।
অথচ সাইফুল্লাহ বাহার ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৮.৪৫ মিনিটে ওই ‘শুকনা ঘেরে জাল টেনে লাখ টাকার মাছ লুট, বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও তাকে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম’ করার কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে সাংবাদিক ফায়জুল কবীরসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ৫(২)২০ নং মামলা দায়ের করেন। ঘটনার তদন্ত ছাড়াই ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সাংবাদিক ফায়জুল কবীরকে তার বাড়ী থেকে পুলিশ আটক করে পরদিন আদালতে প্রেরণ করেন। একটি মিথ্যা সাজানো মামলায় একজন সাংবাদিককে জেলে পাঠানোর ঘটনায় গোটা সাংবাদিক মহল হতবাক হয়ে পড়েছে। এনিয়ে সাংবাদকিদের পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টির সুস্থ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।