যশোরে পরকীয়া ও স্বর্ণালংকার চুরির অপবাদে কেটে দেয়া হলো গৃহবধূর চুল:তিন নারী গ্রেফতার
যশোরের চৌগাছায় পরকীয়া ও স্বর্ণালংকার চুরির অপবাদ দিয়ে এক গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ওই নারীর চার বছর বয়সী মেয়েকেও মারধর করা হয়েছে।
এ অভিযোগ উঠেছে ভাড়া বাসার মালিকের স্ত্রী ও তার দুই মেয়ের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই গৃহবধূ ও তার মেয়ে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় নির্যাতিত নারীর স্বামীর করা মামলায় ভাড়া বাড়ির মালিক জাফর ইমামের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া ও তার দুই মেয়ে জান্নাতারা ইমাম ও সুমাইয়া ফারজানাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বুধবার রাতে চৌগাছা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কারিগর পাড়া গ্রামে একটি বাড়িতে এ বর্বর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
নির্যাতিতা নারীর স্বামী ইউনূছ আলীর এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় ৮ মাস ধরে তিনি তার স্ত্রী ও শিশু মেয়েকে নিয়ে চৌগাছা পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের কারিগরপাড়ায় জাফর ইমামের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। গত ২৬ জানুয়ারি তিনি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে রেখে গ্রামের বাড়ি অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামে যান। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি বাড়ির মালিকের মেয়ে সুমাইয়া ফারজানা মোবাইল ফোনে জানায় তার স্ত্রী তাদের বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে পালিয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি ভাড়া বাড়িতে এসে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে স্ত্রীকে খুঁজে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় একটি মামলা হয় এবং পুলিশ তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। সেখান থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বুধবার তারা ভাড়া বাড়িতে যান। সেখানে রাত ১২টার দিকে ভাড়াটিয়ার স্ত্রী ও দুই মেয়ে তাদের ঘরে গিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে নারীকে বেদম মারপিট করে। এ সময় তার শিশু মেয়ে কান্নাকাটি করলে জান্নাতারা ইমাম তার গলা টিপে ধরে এবং ঘরের চৌকির সঙ্গে আঘাত করে। তারা ওই নারীর স্বামীকে বলে, ‘হয় তোর স্ত্রীকে স্বর্ণ দিতে বল, না হলে এখনি তার মাথার চুল কেটে (ন্যাড়া) করে দিবি।’
ইউনূছ আলী চুল কাটতে অস্বীকার করলে তারা তার শিশু মেয়েকে নিয়ে দোতলার দিকে উঠে যায় ও মারপিট করতে থাকে। এ সময় মেয়ের কান্না ও স্ত্রীর চিৎকার সহ্য করতে না পেরে সে বলে মেয়েকে তার কাছে নিয়ে আসতে, সে স্ত্রীর চুল কেটে দিচ্ছে। এরপর তারা মেয়েকে তার কাছে নিয়ে আসে এবং তার হাতে একটি কাচি (কাইচি) দিয়ে স্ত্রীর চুল কেটে দিতে বাধ্য করে। সে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর চুল কেটে দেয়ার পরও তারা কোদালের আছাড় দিয়ে তাকে, তার শিশু মেয়ে ও স্ত্রীকে মারপিট করে। পরে তাদের চিৎকারে পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে বিষয়টি সে থানা পুলিশকে জানালে এ বিষয়ে মামলা হয়।
হাসপাতালে ওই নারী অভিযোগে জানান, তার অপারেশনের জায়গা, মাথাসহ শরীরের গোপন স্থানেও গুরুতর আঘাত করা হয়েছে।
হাসপাতালে নার্সরা তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন। তাকে ও তার শিশু মেয়েকে এক্সরেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়েছেন।
চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই নারীর সারা শরীরে নির্যাতন করেছে বাড়ির নারীরা। বাচ্চাটিকেও নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং অভিযুক্ত তিন নারীকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।