সংসদে চলাচলের অযোগ্য সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারসহ তালা-কলারোয়া ব্যাপক উন্নয়নের দাবি জানালেন মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি
সংসদে সড়ক ও জনপদের চলাচলের অযোগ্য সড়কগুলো দ্রত সংস্করসহ তালা-কলারোয়া ব্যাপক উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন তালা-কলারোয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তিনি সড়ক সংস্কারসহ তালা-কলারোয়ার ব্যাপক উন্নয়নের দাবি জানিয়ে বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আলোচনার প্রথমেই স্মরণ করতে চাই, যিনি জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃত, যিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, যিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দেশের স্বাধীনতার জন্য, যার কর্ম ও অবদান সারা বিশ্ববাসীর কাছে স্বীকৃত,যার ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করেছে, যিনি এই দেশ শুধ স্বাধীন করেই যাননি যুদ্ধ বিধস্ত দেশকে উন্নয়নের জন্য যিনি বুকের রক্তও জীবন দিয়ে গেছেন, জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। আমার নির্বাচনী এলাকা তালা-কলারোয়া আলোকিত হয়েছে শতভাগ বিদ্যুতায়নের মধ্য দিয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুদৃশ্য ভবন শিক্ষাকে আলোকিত ও বিকাশিত করছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মানুষ আজ অনাহারে নেই। কপোতাক্ষ খননে আজ লবদ্ধতা মুক্ত। উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক, গ্রামীন সড়ক আজ পদচারনা মুখরিত। জামাত-বিএনপির সন্ত্রাসী জনপদ থেকে আজ সাতক্ষীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বাদ গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমতে চায়না। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার বিষয়টি অনেকাংশ জড়িত। ইতিপূর্বে বর্তমান সরকার এ বিষয়ে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে কেন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে নজর দেয়া উচিৎ। বিশেষ করে মন্ত্রণালয় ও নীতি নির্ধারকদের যত্নবান হতে হবে। বর্তমানে সম্পূর্ণ ভুল নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন খেলাপী ঋণ আর বাড়বেনা কিন্তু তা হয়নি। সমঝোতায় লুট হচ্ছে ব্যাংকের টাকা। নামমাত্র ব্যবসায়ী, ব্যাংক পরিচালক, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাজনীতিকের সংঘবদ্ধ চক্র সুকৌশলে লুট করছে ব্যাংকের টাকা। ভুয়া কাগজপত্র মর্টগেজ হিসেবে দেখিয়ে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে যাচ্ছেন এই জালিয়াতরা। আবার কোনো মর্টগেজ ছাড়াই কর্পোরেট গ্যারান্টির নামে দেদার ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক গুলো। এসব কাজ হচ্ছে ব্যাংক মালিক, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও জালিয়াত চক্রের যোগ সাজশে। ফলে ব্যাংক খাত থেকে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে পড়ছে জনগণের গচ্ছিত টাকা। বাংলাদেশ থেকে অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে “রুখোলুটেরা, বাঁচাও দেশ” স্লোগানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এই দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার কারীদের তালিকা প্রকাশসহ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
ধর্ষণ মহা আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। স্বাভাবিক কারণে ধর্ষকরা গণধর্ষণ করে উল্লাস করে, গণধর্ষণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার সাহস দেখায়। ধর্ষণ কান্ড এখন প্রতিদিনের সংবাদ। ধর্ষণের বিচারে বর্তমান আইনই বাধা। ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বলতা ও বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রুত ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি করতে বেশি বেশি ট্রাইব্যুনাল ও বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। ধর্ষকদের দ্রুত কঠিন বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সীমান্ত হত্যা ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বিদ্বেষ তৈরী করে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু দেশ। ভারতের পার্শবর্তী দেশ চীন, পাকিস্তান ও নেপাল সীমান্তে সীমান্ত হত্যা বিরল ঘটনা। তাহলে কেন বাংলাদেশিরা ভারতীয় বুলেটে জীবন দিবে? ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে আমাদের অদক্ষতা, অযোগ্যতাই দায়ী। আমরা চাই সাহসী পররাষ্ট্রনীতির বাস্তবায়ন। এই সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই শরনার্থী রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতায় বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখন ভাবতে হবে আমরা তাদের খাওয়া-পরা-বাসস্থান দিয়ে কালসাপ তৈরী করছি কিনা। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপরহত্যা-নির্যাতন বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন রায় দিয়েছে। এ রায়ের মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপবৃদ্ধি করতে হবে।
করোনা ভাইরাসের মতো মহাতঙ্কে আামাদের দেশের দুর্নীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এই সরকারের ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করবে। ব্যাংক-আর্থিক খাত লুন্ঠন, দুর্নীতি, অপশাসনের কারণে জনগণ বর্তমান সরকারের প্রতি দৃঢ় আস্থা রাখতে পারছেনা। সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তা, বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনভাতা জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বিগুন করেছেন। উৎসব ভাতা ও বৈশাখীভাতা প্রদান করছেন। বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘুষের পরিমাণও দ্বিগুন হয়েছে। এর প্রভাবে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাহীন তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের সাথে অসাদাচরণকারী অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বর্তমান সরকার সারা দেশের ন্যায় ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষিত বেকার যুবকদের তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়েছেন। কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত হতাশ হচ্ছে তাদের ভবিষৎ নিয়ে। তাদের সংযুক্ত কর্মক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে চাকুরীর ব্যবস্থার জন্য এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে। বিএনপি-জামাত শাষণামলে সারের জন্য কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। কৃষককে সরকার ভূর্তকি প্রদান করছে কিন্তু ভূর্তকি কি প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছে ? প্রশ্নটি আমি তুলেছি একারণে যে প্রকৃত কৃষকের হাতে জমি নেই। কৃষকরা ফসল ফলায় জমি বর্গা বাইজারা নিয়ে। কৃষকের ঘর থেকে ধান মধ্যস্বত্যভোগীদের হাতে পৌঁছালে ধানের দাম বৃদ্ধি পায়, চালের দাম বৃদ্ধি পায়। প্রকৃত কৃষক কিভাবে তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে তার পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বর্গা চাষীদের তালিকা তৈরী, ইউনিয়ন ভিত্তিক ক্রয় কেন্দ্র ও খাদ্য গুদাম তৈরী করতে হবে। ১৯৮৭-এর ভূমিসংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বর্গা চাষীদের বর্গাস্বত্ব প্রদানকরা এবং তাদের সমিতিতে সংগঠিত করে কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। একইভাবে খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবিদের নিবন্ধন এবং সারা বছর পল্লীরেশনিং ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। ৬০ বছরের উর্ধ্বে খেতমজুর, ভূমিহীন, শ্রমজীবি মানুষের এককালীন পেনশন ও মাসিকভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে সাথে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা আগামী অর্থবছর থেকে চালু করতে হবে।
আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি তালা ও কলারোয়া উপজেলায় ২টি অডিটোরিয়াম, সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীন চলাচলের অযোগ্য কলারোয়া থেকে সরসকাটি ও কুমিরা থেকে তালাসড়ক দুটি প্রশস্তসহ দ্রুতসংস্কার করা, তালা সদর ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তর, পাটকেলঘাটা থানাকে উপজেলায় উন্নীতকরণ, কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাটকেলঘাটা বাজারের মধ্যে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট অতিদ্রুত নির্মাণ করে আধুনিক বাজারে রূপান্তর করা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বিএনপি-জামাত কতৃক সাতক্ষীরায় যে নৃশংসহত্যা-সহিংসতা করেছিল তাতে ১৬ জন জীবন দিয়েছিল। সেই ১৬ জন হত্যার বিচার এখনও শুরু করা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে কিন্তু নানা গাফিলতির কারণে সেই বিচার হচ্ছে না। এ গুলো দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে পারলে আমাদের দেশে যে বিচার হীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব এবং যাদের জীবনের বিনিময় আমরা সংসদে দাড়িয়ে আছি তাদের কৈফিয়েত দিতে পারব।
চতুর্থ শিল্প বিল্পবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষে বিজ্ঞান, কারিগরি প্রযুক্তি শিক্ষা আমাদের দেশের উন্নয়ন ও বিশ্ব শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণে ভূমিকা রাখবে। সাতক্ষীরা জেলায় প্রযুক্তি ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি জানিনা, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভূক্তিকরণের নীতিমালা কারা প্রণয়ন করেছেন। যে সকল প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করা হয়েছে তা নিয়ে আমাদের বিতর্কিত হতে হয়েছে। আগামীতে বাদ পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করণে সংসদ সদস্যদের মতামত গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি এবং দ্রুত এমপিওভূক্ত করে এ বিতর্কের অবসান করা জরুরী।
মুজিব শতবর্ষে নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে সকল নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় করণের জন্য জোর দাবি করছি। মুজিবশতবর্ষ ক্ষণগণনার প্রাক্কালে মহান নেতার প্রতি পুণরায় শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, বৈষম্য অবসানে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমানো, আঞ্চলিক সমস্যা কমানো, কৃষিভিত্তিক শিল্প-কলকালখানা গড়ে তোলা ও বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন, দুর্নীতি মুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়ে মুজিব শতবর্ষকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। এটাই আমাদের কাম্য।