আলু দিয়ে তৈরি হচ্ছে পলিথিন
বাংলাদেশে এবার আলু দিয়ে পলিথিন তৈরি হচ্ছে। আলু থেকে পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ পলিথিন ও প্লাস্টিকের দূষণ কমানোর পাশাপাশি দেশের আলু চাষি ও কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের জন্যও সুফল বয়ে আনতে পারে।
এই ব্যাগ তৈরি করেছেন মাহবুব সুমন। তিনি তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নবায়নযোগ্য শক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বিকল্প জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা গবেষক দলের সদস্য।
মাহবুব সুমন জানান, ২০১৮ সালের এপ্রিলে মুন্সিগঞ্জ এলাকার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে সৌর বিদ্যুতের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার পর তাদের ব্যবসায়িক দুরবস্থার কথা জানতে পারি। দেশের উত্তরাঞ্চলে আলুর চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় একসময় একচেটিয়া ব্যবসা করলেও মুন্সিগঞ্জের আলু চাষি ও কোল্ড স্টোরেজগুলো কয়েক বছর ধরে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে। কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা আমাদের জানান, তাদের নতুন করে বিনিয়োগের সক্ষমতা নেই।
এ পরিস্থিতিতে আলু থেকে কোনো সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি প্রোডাক্ট ডেভেলপ করে দিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষতি কিভাবে এড়ানো যায় তা ভাবতে থাকি। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিসহ পণ্যটি যদি পরিবেশবান্ধব হয় তাহলে তাদের উপকারের পাশাপাশি পরিবেশের দূষণও কম হবে। মাঝখান থেকে প্রচুর নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাতো আছেই।
মাহবুব জানান, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে ইয়ান শ্মিডট নামে আমার এক জার্মান এনার্জি স্পেশালিস্ট বন্ধু আমাকে ‘পলকা’ বানানোর একটি প্রক্রিয়া শিখিয়ে দেন। শ্মিডটের সাহায্য নিয়ে আলু দিয়ে একদমই স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও কমনসেন্সের ব্যবহার করে আমরা যে পলিথিন বানালাম তার নামই পলকা। কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক এর মধ্যে নেই।
তিনি বলেন, অণুবীক্ষণ যন্ত্রে প্লাস্টিককে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তাতে হাইড্রো কার্বনের খুব ছোট ছোট কণা বা মনোমার পরপর সজ্জিত হয়ে দীর্ঘ শেকলের পলিমার তৈরি করে আছে। এ রকম অনেক পলিমার একত্র হয়ে প্লাস্টিক তৈরি করে। প্লাস্টিকের পাতলা ব্যাগ পলিমারের তৈরি বলে তাকে বলা হয় পলিথিন। এই হাইড্রোকার্বন পলিমার মাটিতে পচে না ও অনেক দূষণ তৈরি করে। জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ তেল, গ্যাস, কয়লা থেকে তৈরি এই পলিথিন পৃথিবী ধ্বংস করছে। এর বিকল্প দরকার। ফলে আমরা যদি এমন পলিমার বানাতে পারি যা একই রকম লংচেইন পলিমার কিন্তু মাটিতে দ্রুত পচে যাবে এবং কোন দূষণ তৈরি করবে না তাহলে ব্যাপারটা বেশ হয়। পলকা হচ্ছে সেই পরিবেশবান্ধব পচনশীল পলিমার, যা আমরা আলু দিয়ে তৈরি করেছি।
তিনি জানান, আলু থেকে তৈরি পলিথিনের ব্যাগের বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরইমধ্যে আলু থেকে এক্সপেরিমেন্টাল পলিথিনের শিট তৈরি করে তা থেকে ব্যাগ ব্যাগ বানিয়ে ভর বহন ক্ষমতা পরীক্ষা করেও দেখেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তিনি আরো জানান, বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে প্রতিটি ব্যাগের দাম হবে ৩ টাকা। এটি ৩০ দিনের মধ্যে মাটিতে মিশে যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি গতানুগতিক সাইজের ব্যাগগুলোর ওজন ধারণ ক্ষমতা ৫/৬ কেজি।