২০১৯ সালে সড়কে ঝরল ৫২২৭ প্রাণ

২০১৯ সালে চার হাজার ৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোট পাঁচ হাজার ২২৭ জন। যা ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার সংখ্যার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে তিন হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহত হওয়ার সংখ্যা ছিল চার হাজার ৪৩৯ জন। ফলে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার সংখ্যা ৭৮৮ জন বেশি। যা ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ বেড়েছে।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ২০১৯ সালের সড়ক দুর্ঘটনার এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় নিসচার মহাসচিব সৈয়দ এহসানুল হক কামাল উপস্থিত ছিলেন।

সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বিগত দুই বছরের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনগণেরর অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া ইত্যাদি মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা যায়। এর ফলে ২০১৯ সালে চার হাজার ৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে পাঁচ হাজার ২২৭জন ও আহত হয়েছে ছয় হাজার ৯৫৩ জন।

এরমধ্যে রেল পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৬২টি। এতে নিহত হয়েছেন ১৯৮ জন ও আহত ৩৪৭ জন। নৌ পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩০টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬৪ জন। আর আহত হয়েছেন ১৫৭ জন। এ দুর্ঘটনাগুলোতে নিখোঁজ রয়েছেন ১১০ জন।

দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনগুলো হলো- বাস ৯৯২টি, ট্রাক এক হাজার ৩৩টি, মোটরসাইকেল এক হাজার ৯৮টি, কাভার্ড ভ্যান ১৬০টি, মাইক্রোবাস ১৫৮টি, নসিমন ৮৩টি, কার ৭৯টি ও অন্যান্য (সিএনজি/ভ্যান/পিক-আপ) দুই হাজার ১৭৮ টি। এসব যানবাহনের মোট নিহত চালক হলো এক হাজার ১৯০ জন। নিহতের মোট ২২ শতাংশ চালক। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই হাজার জন পথচারী মারা গেছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৫০ দশমিক ০৪ শতাংশ।

তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ময়মনসিংহ জেলায়। সেখানে ২১১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৮৮ জন, আহত হয়েছেন ২৬৬ জন। এরপর ঢাকা জেলায় ৩০৯টি দুর্ঘটনায় ৩৩৫ জন নিহত ও আহত ৩২৭ জন। এরপরই চট্টগ্রাম জেলায় ২২৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯৯ জন ও আহত হয়েছেন ২৫৫ জন। শরীয়তপুরে ৯টি দুর্ঘটনার বিপরীতে নিহত হয়েছেন ৩৫ জন আহত হয়েছেন ১০ জন। আর সবচেয়ে কম নিহত হয়েছে ঝালকাঠি জেলায়। সেখানে ১২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ জন ও আহত হয়েছেন ১২ জন।

এ ছাড়া সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পুরোপুরি কার্যকরী না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আরো সোচ্চার হওয়া ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

তিনি আরো বলেন, এ আইনটি নিয়ে একটি কুচক্রী মহল জনসাধারণ ও চালকদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করছে। এ আইনটি কোনো জেল, জরিমানার জন্য নয়। এই আইনটি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য করা হয়েছে। সবাই যদি আইনটি মেনে চলে তবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সেখানে জেল জরিমানার কথাই আসে না। এছাড়া সরকার কর্তৃক সেইফ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা দ্রুত বাস্তবায়ন, মহাসড়কে একমুখী চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চতা অনুযায়ী বিভাজন, দুইপাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা সড়ক নির্মাণ করতে হবে। পথচারিদের জন্য ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজ দখলমুক্ত করণ ও মনিটরিং করতে হবে। সড়কের ত্রুটি অচিরেই দূর করতে হবে। স্কুল কলেজের শিক্ষকদের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পথচারীরা গাড়ি চাপায়, পেছন দিকে ধাক্কাসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পথচারীদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কিত ধারণা না থাকা, রাস্তা চলাচল ও পারাপারে মোবাইলফোন ব্যবহার, জেব্রা ক্রসিং, আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রীজ ব্যবহার না করে যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।

বিআরটিএ কর্তৃক সরবরাহ করা রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশে বাসের সংখ্যা ৪৯ হাজার ২৭২টি। এর মধ্যে ৯৯২ টি বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এক লাখ ৫১ হাজার ৭৮৪ টি ট্রাকের মধ্যে এক হাজার ৩৩ টি ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এক লাখ ৯৪ হাজার ৫৬ টি বাস ও ট্রাক মিলে এ বছর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে দুই হাজার ২৫টি। বাকি ৪০ লাখ যানবাহনে সড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণ দুই হাজার ৬৭৭টি। এর দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে বাস ও ট্রাক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বেশি দায়ী। এ জন্য তাদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, দক্ষতাবৃদ্ধি ও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ জরুরি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)