নেতা-কর্মীদের নীতি আদর্শ নিয়ে চলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আওয়ামী লীগকে দেশের সব থেকে বড় এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক দল আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলটির নেতা-কর্মীদের নীতি ও আদর্শ নিয়ে চলার এবং ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন রাজনৈতিকের জীবনে নীতি-আদর্শই সব থেকে বড় কথা। আর সেই আদর্শের জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং সংগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যিনি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন তিনিই সফল হতে এবং দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারেন।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই উপমহাদেশের প্রাচীন এবং অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সেই সংগঠন যে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বার বার আত্মত্যাগ করেছেন এবং তারই ফসল বাংলাদেশের জনগণ আজ পেয়েছেন।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন পূরণ এবং আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায় থেকে আরো শক্তিশালী করাই তার লক্ষ্য বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার সরকার ‘বাঙালি জাতিকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে চায় এবং সেইলক্ষ্য নিয়েই তাদের রাজনীতি’। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে আমি এই অনুরোধই করবো, আপনাদেরও সেই চিন্তা-চেতনা নিয়েই কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী নীতি ও আদর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনকে অনুসরণ করার জন্য তার একটি ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্বৃতি হিসেবে অংশ তুলে ধরে বলেন, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের জন্য এটা একান্তভাবে দরকার। তিনি বলেন, ‘নীতিবিহীন নেতা নিয়ে অগ্রসর হলে সাময়িকভাবে কিছু ফল পাওয়া যায়, কিন্তু সংগ্রামের সময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।’
দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আামিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ-পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম স্বাগত বক্তব্য দেন। দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৫২’র ভাষা শহীদ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, জাতীয় চারনেতা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ দেশ মাতৃকার সব গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন আগামীকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের জাতীয় কাউন্সিলের থিম হচ্ছে- ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ।’
সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আগত প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং ১৫ হাজার ডেলিগেটসহ ৫০ হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, এমপি, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল-২০১৯’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পাশাপাশি সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
এরপর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় পবিত্র কোরআনসহ ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠের মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে মিছিলের মোহনায় পরিণত হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষরের ঐতিহাসিক স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। শৈত্য প্রবাহের তীব্র ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে দলে দলে নেতা-কর্মীরা দুপুরের আগেই সমগ্র সম্মেলনস্থল, পার্শ্ববর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শাহবাগ, হাইকোর্ট এবং তার আশাপাশের এলাকা পূর্ণ করে। স্বতঃস্ফূর্ত নেতা-কর্মীদের ভিড়ে সর্বত্র লোকে লোকারণ্য হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয় সমগ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। গাছে গাছে মরিচবাতি, আশপাশের এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড এবং মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে সজ্জিত করা হয়। আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন, উন্নয়ন এবং মেগা প্রকল্পগুলোর ছবি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং জাতীয় চারনেতার ছবিও সেখানে শোভা পায়।
সম্মেলনের মূল মঞ্চ তৈরি হয় পদ্মাসেতুর আদলে এবং ১০২ ফুট দীর্ঘ ও ৪০ ফুট প্রশস্থ। মূল মঞ্চটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যেন পদ্মা বুকে বিশাল এক নৌকা ভেসে বেড়াচ্ছে। চারপাশ জুড়ে রয়েছে প্রমত্তা পদ্মার বিশাল জলরাশি। পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবনের উপস্থিতিও দেখা যায়।