‘ক্রাইম পেট্রল’র কৌশল দেখে বন্ধুকে হত্যার চেষ্টা তিন শিশুর

ভারতীয় জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রল’-এ খুনের কৌশল অবলম্বন করে পাবনায় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রকে কয়েকজন বন্ধু মিলে হত্যার চেষ্টা করেছে। 

গত রোববার ঈশ্বরদী উপজেলা এ ঘটনা ঘটেছে। এদিন রাতেই ইয়াসির আরাফাত নামে ওই ছাত্রকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকা নেয়া হয়েছে।

আরাফাত এই বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। খুনের চেষ্টা করা তিন বন্ধুর মধ্যে দুজন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, আরেকজন সপ্তম শ্রেণির। তাদের সবার বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলায়। অভিযুক্ত তিন শিশুকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইয়াসির আরাফাতের এক জোড়া রোলার স্কেটস ছিল। তার এক বন্ধু বাকীতে সেটি কিনতে চায়। আরাফাত রাজি হয়ে বন্ধুকে স্কেটস জোড়া দিয়ে দেয়। পরে ওই বন্ধু যখন টাকা দিতে পারছিল না, তখন আরাফাত টাকার বদলে বন্ধুর কবুতর জোড়া চায়। সে কবুতর দিতেও রাজি হয় না।

পরে দুই বন্ধুর সঙ্গে পরিকল্পনা করে ক্রাইম পেট্রলের কাহিনি অবলম্বনে আরাফাতকে খুনের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামাফিক তারা আরাফাতকে একটি আখখেতে নিয়ে বেদম মারধর করে। শেষ পর্যন্ত আরাফাতকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

ঈশ্বরদী থানার এসআই অসিত কুমার বসাক একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরাফাতকে খুঁজে বের করার পুরো বর্ণনা দিয়েছেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী, রোববার সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বের হয় আরাফাত। দুপুরে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও ফেরেনি সে। আরাফাতের পরিবার থানায় খবর দিলে পুলিশ আরাফাতের কাছের এক বন্ধুকে ডেকে আনে।

জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, দুপুর ১২টার দিকে আরাফাতকে একটি ছেলের সাইকেলে করে যেতে দেখেছে। আরো দুই শিশুও একই কথা জানায়। এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর একপর্যায়ে একটি শিশু বলে, স্যার আমার কিছু হবে না তো? পরে পুলিশের আশ্বাস পেয়ে সে বলে, আরাফাতের লাশ কোথায় আছে আমি জানি, কিন্তু আমি কাছে যেতে পারব না।

এরপর রাত ১১টায় ওই শিশুর দেখানো জায়গায় পৌঁছায় পুলিশ। জায়গাটি ঈশ্বরদী থানা থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে। যাওয়ার পথে এক শিশু বলে, স্যার আমরা আখখেতের ভেতরে আরাফাতকে মেরে ফেলেছি। সে ওখানে মরে পড়ে আছে।

তাদের কথামতো আখখেতের ভেতরে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় আরাফাতকে পাওয়া যায়। মাথায় অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন, বাঁ কানের অনেকটা অংশ কাটা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। মারধরের পর দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা ধরে রক্তক্ষরণ হয়। অস্ফুট স্বরে বলছিল, আপনারা কারা? আমাকে একটা বালিশ দিন আমি একটু ঘুমাব। আমার আব্বু আম্মু কোথায়?

ঈশ্বরদী থানা-পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, রোববার তিন বন্ধু আরাফাতকে এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এরপর তারা আখখেতে গিয়ে একসঙ্গে আখ খায়। একপর্যায়ে এক বন্ধু আরাফাতকে বলে, আখের গোড়ার দিকে যে নতুন কুশি বের হয়েছে সেগুলো ভেঙে নিয়ে বাড়িতে লাগালে আখ গাছ হবে। পরে বন্ধুদের কথামতো এই কাজ করার সময় পেছন থেকে একজন আরাফাতের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। সে সময় আরাফাত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ফেরার পথে রডটি একটি পুকুরে ফেলে দেয় তারা। রক্তমাখা সেই রডটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঈশ্বরদী থানার ওসি বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, আটক তিন বন্ধুই ক্রাইম পেট্রল দেখার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরাফাতকে হত্যার চেষ্টা করেছে বরে স্বীকার করেছে। তারা আগে থেকেই ঘটনাস্থলে ব্যাগে করে লোহার রড রেখে এসেছিল। তাদেরকে যশোর শিশু সংশোধনাগার কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)