বুলেট পিঁপড়ার কামড় খেয়ে পুরুষত্ব পরীক্ষার কঠিন রীতি
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পিঁপড়া হিসেবে খ্যাত বুলেট পিঁপড়া। তার বসবাস আমাজন জঙ্গলে। ভাবতেই পারছেন কতটা বিষে পরিপূর্ণ এই পিঁপড়ার জাতটি।
ভিমরুলের মত দেখতে এই পিঁপড়ার কামড় বুলেটবিদ্ধের যন্ত্রণা দেয়। এজন্যই এদের বুলেট পিঁপড়া বলা হয়। আর এই পিঁপড়ার কামড় খেয়ে কি-না পুরুষত্বের পরীক্ষা দেয় এক জাতির পুরুষরা।
২৬টি রাজ্যে ও একাধিক বড় শহর নিয়ে ব্রাজিলের অবস্থান। আর সেখানেই আমাজন জঙ্গল। ঘন গাছের আচ্ছাদনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জঙ্গলে এখনো স্থানীয় অনেক আদিবাসীদের বাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। জীবনযাত্রায় রয়েছে অদ্ভুত সব রীতিনীতি।
আমাজনে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বৃহত্তম উপজাতি হলো সাতেরে মাওয়ে। সেখানকার জনসংখ্যা মোটামুটি দশ হাজারের উপরে। এই উপজাতিটি আমাজনের উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে। যদিও তারা নির্জনতায় বাস করে এবং বহিরাগতদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও কম। তবে এই উপজাতিরা দর্শনার্থীদেরকে নিজেদের অনন্য জীবনযাত্রা ও ঐতিহ্য জানার সুযোগ করে দিয়েছে। যা সত্যিই অবাক করা। তাদের জীবনযাত্রার রীতিনীতি খুবই উদ্ভট ও ভয়ংকরও বটে।
জীবনধারণ পদ্ধতি
চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করে এই উপজাতিরা। তারা গুআরনা নামক উদ্ভিদ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করে। অত্যন্ত উপকারী এই উদ্ভিদের ফল শরীরের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ। যদিও প্রথম দিকে এই আদিবাসীরা কৃষিকাজ নিয়ে অতটা ভাবতেন না। তবে ক্রমেই তারা চাষাবাদে অগ্রসর হয়েছে। কাজের দক্ষতা ও সাহসই গোষ্ঠীটিকে বৈরী পরিবেশ ও শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করছে। এই উপজাতির পুরুষরা জীবনধারণে অত্যন্ত পরিশ্রমী, ভালো যোদ্ধা এবং শিকারে পারদর্শী।
যোদ্ধা হওয়ার লক্ষ্য
তরুণ বয়স থেকে সাতেরে মাওয়ে উপজাতির যুবকরা যোদ্ধা হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বড় হয়। তবে যোদ্ধা হওয়া তো আর মুখের কথা নয়! তাদের রয়েছে বিভিন্ন রীতিনীতি, সেসব মানলেই যোদ্ধা হওয়া সম্ভব। এজন্য যুবকদের পরীক্ষা নেয় বয়স্করা। আমাজনের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তরুণদের। তখন থেকেই তারা শারীরিক ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা শিখে। যা সাধারণের জন্য চিন্তা করাটাই অসম্ভব।
পিঁপড়ার কামড় সহ্য করে পুরুষত্বের পরীক্ষা
সাতেরে মাওয়ে উপজাতির তরুণদের একটি কষ্টকর পরীক্ষা দিতে হয়। যা বিশ্ববাসীর চিন্তার বাইরে! শক্তি পরীক্ষা করতে পিঁপড়ার কামড় সহ্য করতে হয় যুবাদের। যেই সেই পিঁপড়া নয় আমাজনের এক বিষাক্ত প্রজাতির পিঁপড়া। নাম তার প্যারাপোনেরা ক্লাভাটার। এর এক কামড়ে ২৪ ঘণ্টা একটানা ব্যথা অনুভূত হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতই যন্ত্রণাদায়ক এই পিঁপড়ার কামড়। এর কামড়ে অত্যাধিক কাঁপুনির সৃষ্টি হয়।
আর এই পিঁপাড়ার কামড় কি-না দশ মিনিট ধরে সহ্য করে এই উপজাতির পুরুষরা। ভাবতে নিশ্চয়ই গাঁ শিউরে উঠছে? জঙ্গল থেকে তারা পিঁপড়াগুলোকে সংগ্রহ করে পাতা দিয়ে তৈরি একজোড়া গ্লাভসের মধ্যে। এই পরীক্ষা শুরু হয় বারো বছর বয়স থেকেই। কম বয়সী ছেলেরা পাঁচ মিনিট (বা তার বেশি) সময়ের জন্য হাতে সেই গ্লাভস পরে পিঁপড়ার কামড় সহ্য করে। যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও বিভৎসও বটে। বয়স বাড়লে অবশ্য দশ মিনিট বা তারও বেশি সময় এই পরীক্ষা দিতে হয়।
সেদিন অনুষ্ঠিত হয় একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। বাঁশ দিয়ে ঘেরা চারকোণা একটি জায়গায় উপস্থিত হয় পরীক্ষার্থী। ঠিক যেন খোঁয়ারে ঢুকেছে সে! এরপর বয়স্ক কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী যুবার হাতে গ্লাভসটি পরিয়ে দেয়। এই অগ্নিপরীক্ষার সময় যখন ছেলেটি যন্ত্রণায় কাতরায় তখন বাকিরা গান এবং নৃত্যে ব্যস্ত থাকে। গ্লাভস সরিয়ে ফেলা হলে, পিঁপড়ার বিষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছেলেটি যন্ত্রণায় কাতরায়। ব্যথা ছাড়াও, এটি কয়েক ঘণ্টার জন্য শরীরকে অবশ করে দেয়। সেইসঙ্গে অচেতন হয়ে পড়ে অনেকেই।
এই প্রথা না মানলে সেই পুরুষরা দৈহিক মিলনেরও অনুমতি পায় না। এই রীতি অনুসারে এই উপজাতির পুরুষরা দৈহিক মিলনের অনুমতি পেতে পিঁপড়ার কামড় সহ্য করা বাধ্যতামূলক! যোদ্ধা হিসেবে এবং পুরুষত্বের প্রমাণ দিতে বুলেট পিঁপড়ায় তাদের ভরসা। এই রীতিতে পুরোপুরি দীক্ষিত হতে অবশ্যই পিঁপড়ার কামড় বিশ বার সহ্য করতে হয় পুরুষদের।