পেঁয়াজ আসে ৪০ টাকায় বিক্রি হয় ২৩০ টাকায়
শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পেঁয়াজ এনে অসদুপায়ে বিপুল মুনাফা করার অভিযোগ উঠেছে আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ট্রাকে ওঠা পর্যন্ত কেজিপ্রতি খরচ পড়ে মাত্র ৪০-৪৫ টাকা। অথচ বিস্ময়করভাবে সেই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রির সময় তার দাম উঠে যায় ২০০-২৩০ টাকায়। অর্থাত্ কেজিতে লাভ ১৬০-১৮০ টাকা। ভোক্তারা একে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়া বলে বিদ্রুপ করছেন।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, আমদানিকারক, শুল্ক কর্তৃপক্ষ, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর কর্তৃপক্ষের লোকজন একজোট হয়ে দেশবাসীকে জিম্মি করে তাদের আর্থিকভাবে ঠকাচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান জানান, তদন্তে দেখা গেছে-গত অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে ৪২ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। হিসাব মতে দৈনিক গড়ে ৭০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়। আমদানির নথি, বিল অব এন্ট্রি পর্যন্ত ঠিক দেখানো হলেও কি পরিমাণ পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হয়েছে তার কোন হিসাব দেখাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য, আমদানির কাগজ তারা যত্ন করে রাখলেও বন্দর থেকে ট্রাকে ডেলিভারির কোন কাগজপত্র নাকি তাদের হাতে নেই। এমনকি গত ২৫ নভেম্বর এক হাজার বস্তা ও ৩০ নভেম্বর এক হাজার ৮০০ বস্তা আমদানি করা পেঁয়াজের কোথায় গেল তা বন্দর, আমদানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি।
এদিকে, বিষয়টি নজরে আনা হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন টেকনাফ সীমান্তের পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ও আমদানি জালিয়াতির তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মো. শাজাহান আলীকে প্রধান করে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এই কারসাজির ঘটনা প্রচার হবার পর স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলের মতে, বিনা শুল্কে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ পেয়ে হাজার হাজার ডলার মিয়ানমারে পাচার করছে আমদানিকারকরা। সেই সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভোক্তা সাধারণকে হয়রানি ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে তারা। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারকের সংখ্যা হচ্ছে ৩৫-৪০ জন। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিলে মিয়ানমারের পেঁয়াজেই দেশের বাজার স্বাভাবিক করা সম্ভব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীমান্ত ব্যবসা সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন- আমদানি কাগজ কলমে রেখে কিছু পেঁয়াজ বাংলাদেশের বাজারে ছাড়া হলেও বাকি পেঁয়াজ মিয়ানমারের গুদামে মওজুদ করে রাখা হয়। সংকট দেখিয়ে এভাবে কিছু কিছু পেঁয়াজ ছাড়ায় বাজার যেমন তেমনই রয়ে যাচ্ছে। ফলে অল্প বিনিয়োগে বিপুল আয় হচ্ছে তাদের।