সাতক্ষীরায় জালিয়াতি ও প্রতারক চক্রের হাত থেকে বাঁচতে এক পুস্তক ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন

জালিয়াতি ও প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন পুরাতন সাতক্ষীরার পুস্তক ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুর রশীদ।

সংবাদ সস্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে আব্দুর রশীদ বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের জিএম শহীদুল ইসলামের কাছ থেকে সাতক্ষীরা সদর থানার পিছনে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ চুক্তিপত্র অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে ‘বই সাগর লাইব্রেরী’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। দোকান ঘর ভাড়া নেওয়ার জন্য মাসিক তাকে পাঁচ হাজার টাকা ও প্রথমে তাকে এক লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। শহীদুল ইসলাম বিদেশে থাকার কারণে প্রতি মাসের ভাড়ার টাকা কখনো ছোট ভাই আশাশুনি উপজেলার বড়দল কলেজের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আবার কখনো মোস্তাফিজুরের শ্বশুর/মামা খাজরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএম সাঈদার রহমান নিতেন। চুক্তিপত্র পরবর্তী দু’ বছরে সাঈদার রহমান দোকানঘর হস্তান্তর বাবদ ও তার(রশীদ) নামে দোকানের বন্দোবস্ত করিয়ে দেওয়ার নামে কয়েক কিস্তিতে আট লাখ টাকা গ্রহণ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, দোকান ঘর ভাড়া নেওয়ার দু’ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মোস্তাফিজ ও তার শ্বশুর সাঈদার রহমান কোন টাকা ফেরত না দিয়ে তাকে দোকান ঘর ছেড়ে দিতে বলেন। নয় লাখ টাকা ফেরত চাইলে তারা সদর থানার উপ-পরিদর্শক শরিফ এনামুল হককে দিয়ে তাকে থানায় ধরে নিয়ে থানা লক আপে একদিন আটক রেখে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। চুক্তিপত্র গ্রহণের দু’ বছর কেটে যাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন যে বন্দোবস্ত গ্রহীতা শহীদুল সেজে তার ভাই মোস্তাফিজুর ও শ্বশুর সাঈদার রহমান যোগসাজশ করে সাক্ষর জালিয়াতি করে তার সঙ্গে লিখিত চুক্তিপত্র তৈরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে মোস্তাফিজ ও তার শ্বশুরকে জানালে তারা কৌশলে চুক্তিপত্রে উল্লেখিত তাদের স্বাক্ষীদের দিয়ে একটি এফিডেফিট করিয়ে তার বিরুদ্ধে উল্টো চুক্তিপত্র জালিয়াতির অভিযোগ এনে মামলা করলে পুলিশ ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে। রাতেই মোস্তাফিজুর ও তার শ্বশুর তার দোকানের তালা কেটে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। একদিন পর জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি সেখানে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন। খুলনা সিআইডি’র উপপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন তদন্তকালে শহীদুলের সাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণ পেয়ে তাকে মামলা থেকে অব্যহতি দেন। পরবর্তীতে তার দায়েরকৃত মামলায় ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর মোস্তাফিজুর জেলে যায়। বর্তমানে তিনি ঘরভাড়ার টাকা আদালতের মাধ্যমে দিয়ে আসছেন। জালিয়াতি ও দেওয়ানী মামলা করায় নিজ স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা মামলার(জিআর ০৯/১৬, আশাশুনি, তাং- ০৭.০১.১৬) আসামী সাঈদার রহমান প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন দিয়ে তাকে দোকান থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়ে ব্যর্থ হয়।

একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতনের মাধ্যমে ঈদগাহ বাজারে উভয়পক্ষের নিয়ে এক শালিসি বৈঠকে সদর থানার উপপরিদর্শক শরিফ এনামুল হকের উপস্থিতিতে সাঈদার রহমান দোকান ভাড়া বাবদ অগ্রিম নেওয়া এক লাখ টাকা ও পরবর্তীতে নেওয়া আট লাখ টাকা ২৮/০২/২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে দোকান ঘর বুঝে নেবেন বলে এক চুক্তিপত্রে সাক্ষর করলেও পরে তিনি তা মানেননি। উপরন্তু গায়ের জোরে তাকে উচ্ছেদ করার জন্য গত পহেলা ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে মোস্তাফিজুর ও সাঈদার দু’জন মিলে তার দোকানের সাইন বোর্ড ভাঙচুর করেন। এ সময় পাশের লিলি মেডিকেলের মালিক তানভির আহম্মেদ লিটু প্রতিবাদ করেন ও ঘটনার ছবি তোলেন। বর্তমানে তাকে খুন, গুম ও প্রশাসন দিয়ে ক্রসফায়ারে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে তিনি তার ব্যবসা পরিচালনা করিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়।

সংবাদ সস্মেলনের মাধ্যমে দোকানের অগ্রিম এক লাখ টাকা ব্যতীত বাকী আট লাখ টাকা ফেরৎ, জালিয়াতির ঘটনায় ন্যয্য বিচার ও নিরাপদে ব্যবসা পরিচালনা করার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)