আবরার হত্যায় মেনে নেয়া হলো সব দাবি

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার পর একে একে মেনে নেয়া হয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি। সেই সঙ্গে প্রায় দুই মাস ধরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা প্রকৌশল শিক্ষার এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ক্লাস শুরুর পথ তৈরি হল।   

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে সোমবার রাতে নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভবিষ্যতে র‌্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের এবং সাংগঠনিক রাজনীতির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িতদের অভিযোগসমূহ মূল্যায়ন ও শাস্তি নির্ধারণ বিষয়ে গঠিত কমিটির রিপোর্ট এর আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে র‍্যাগিংয়ের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে তিন ধাপে।

র‍্যাগিংয়ের কারণে কোনো ছাত্রের মৃত্যু হলে, গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা প্রতিবন্ধিতা তৈরি হলে, মানসিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হলে কিংবা শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা।

র‌্যাগিংয়ের নামে মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা,অর্থ বা জিনিসপত্র কেড়ে নেয়া, উত্ত্যক্ত করা, সাময়িক মানসিক ক্ষতি করা, হুমকি দেয়া বা শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টার জন্য সতর্ক করা, জরিমানা করা, হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার কিংবা একটি নির্দিষ্ট সময় শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার শাস্তি হতে পারে। পাশাপাশি অভিযুক্তকে ক্লাসে ফেরার আগে মনো-সামাজিক কাউন্সেলিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

র‌্যাগিংয়ের পরোক্ষ অংশগ্রহণ কিংবা র‌্যাগিংয়ের সময় উপস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগতদের কোনো কাজ করতে বাধ্য করার মত ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সতর্ক করা, জরিমানা করা, হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা যাবে। পাশাপাশি তাকে বাধ্যতামূলকভাবে সোশাল সাইকোলজি বা এথিকস কোর্স করতে হবে।

আর যে কোনো মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাংগঠনিক রাজনীতিতে কারও সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ পেলে, রাজনৈতিক সংগঠনের পদে থাকলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে মিছিল, মিটিং, পোস্টার টাঙানোর মত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে মাত্রা অনুযাযী সতর্ক করে দেওয়া, জরিমানা করা,সাময়িকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করার সুযোগ থাকবে।

৬ অক্টোবর শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে আবরারের মৃত্যু হলে আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ৯ অক্টোবর বুধবার সকালে শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। এদিন ঘোষণা করা হয় এ দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

এর ফলে অচল হয়ে পড়ে বুয়েট। এই আন্দোলনের চাপে পড়ে বুয়েটে নিষিদ্ধ করা হয় সাংগঠনিক রাজনীতি। এরই সঙ্গে নেয়া হয় আরো কিছু উদ্যোগ।

শিক্ষার্থীদের ১০ দফার কয়েকটি মেনে নেয়ার পর ১৫ অক্টোবর মাঠের আন্দোলন থেকে সরে আসে বুয়েট শিক্ষার্থীরা; তবে মামলার অভিযোগপত্র ও অন্য দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেয়।

পাঁচ সপ্তাহের তদন্ত শেষে পুলিশ ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিলে ক্লাসে ফেরার জন্য বুয়েট কর্তৃপক্ষকে আরো তিনটি শর্ত দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার; আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলের আগের র‌্যাগের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেয়া এবং সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‌্যাগের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা করে বুয়েটের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে তা অন্তর্ভুক্ত করা ছিল তাদের তিনটি দাবি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)