শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

দশ বছর বয়সী রাইয়ান মাঠের এক কোনে বসে আছে। তার সমবয়সী বাচ্চারা মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলেও খেলায় কোন মন নেই তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কী যেন দেখছে। এরমধ্যে তার কয়েকজন বন্ধু তাকে খেলার জন্য ডাকতে আসলেও যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল রাইয়ানের বাবা আর মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে। এমনকি মাঝে মাঝে মারধরও চলে। সবই হয় রাইয়ানের সামনে। এসব দেখে সে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েছে। সে এখন কারো সাথে কথা বলতে ভয় পায়। আর তাই এই অল্প বয়সেই এত উদাসীন থাকে রাইয়ান।

মাইশার বর্তমান অবস্থা ঠিক রাইয়ানের মত। পনের বছর বয়সী মাইশা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। কিন্তু কোনভাবেই সে পড়ায় মন বসাতে পারছে না। স্কুলের মডেল টেস্ট’র রেজাল্টও খুব ভালো করেনি। কিন্তু ক্লাস নাইন পর্যন্ত তার রোল নাম্বার এক থেকে তিনের মধ্যে ছিল সব সময়। সবার কাছেই খুব আদরের ছিল মাইশা। টেষ্টের রেজাল্টের পর স্কুলের ক্লাস টিচার তাকে একলা ডেকে নিয়ে তার কাছ থেকে জানতে চান- কেন এমন হচ্ছে? অনেকক্ষণ তার সাথে কথা বলার পর ক্লাস শিক্ষক জানতে পারেন, মাইশার বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না গত কয়েক মাস ধরে। বাসায় প্রতিনিয়তই ঝগড়া লেগে থাকে। তাই সে মনযোগ দিতে পারছে না পড়াশোনায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত জরুরী। শিশুর বিকাশ নিয়ে অধিকাংশ বাবা-মা’ই এখন বেশ সচেতন। তাদের সার্বক্ষনিক চেষ্টা থাকে তাদের বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মাদের নিজেদের মধ্যকার সমস্যা এত বেড়ে যায় যে, তারা আর বাচ্চাদের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। আর এই অমনোযোগীতার কারনেই অনেক বাচ্চা অবসাদে ভোগে, খারাপ পথে চলে যায়।

তাদের মতে বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য্য। বাচ্চাদের বুঝাতে হবে যে, তারাই বাবা-মায়ের অমূল্য সম্পদ। অত্যন্ত যত্ন দিয়ে তাদের বড় করে তুলতে হবে। জীবনের প্রতিটি নিয়ম-কানুন তাদের শেখাতে হবে।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, প্রায় সব বাচ্চাই দুষ্টুমি করে। কিন্তু অতিরিক্ত দুষ্টুমির জন্য বাচ্চাদের ভয় দেখালে বা তাদের মারধর করলে সমস্যার সমাধান হয় না। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শিশুরা সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এবং এসব শিশুদের অত্মবিশ্বাষ কমে যায়। তাদেরকে বারবার করে বুঝাতে হবে-কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। শিশুর কথাও খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।

তিনি বলেন, শিশুদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাদের সাথে সব সময় আলোচনা করতে হবে। তার চাহিদার কথা, তার ইচ্ছার কথা শুনতে হবে। পাশাপাশি শিশুর ভালো কাজের প্রশংসাও করতে হবে। তাদের পছন্দের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।

ডা. মুরাদ বলেন, অনেক বাবা-মা’ই সন্তানদের বাইরে খেলাধুলা করতে দিতে চান না। এটা সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত বড় বাধা। শিশুরা খেলাধুলা করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে। অন্য বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী হয়। এতে তার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে। শিশু মানসিকভাবেও সুস্থ থাকে।

এছাড়াও সন্তানদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে। তাদেরকে এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। নিজের বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখার শিক্ষা, বইপত্র গুছিয়ে রাখার শিক্ষা তাকে ছোটকাল থেকে দিতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে বড়দের কথা বলার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সব ধরনের আলোচনা শিশুদের সামনে না করাই ভালো। কারণ এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শিশুদের সামনে বড়দের ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না। বিশেষ করে বাবা-মা’র মধ্যকার ঝগড়া বাচ্চাদের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরী করে। অনেক সময় বাচ্চারা অবসাদে ভুগতে থাকে।-বাসস

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)