আকাশ নীলায় বিলীন হয়ে গেলো ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ্য টাকার সদ্য নির্মিত স্থাপনা
সাতক্ষীরার আকর্ষণ সড়কপথে সুন্দরবন বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে সুন্দরবন একটি অন্যতম। সড়কপথে সারা বিশ্বের মধ্যে সুন্দরবন দেখার মত দৃশ্য শুধুমাত্র সাতক্ষীরায় দেখাতে পাওয়া যায়। সুন্দরবনকে সুন্দর করে তোলার জন্য ও পর্যটকদের সুন্দরবন মুখর করার জন্য ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে শ্যামনগর উপজেলায় সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে বুড়িগোয়ালিনী ও মুন্সীগঞ্জের মিলন স্থলে নির্মাণ করা হয় আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের মধ্যে একটি অন্যতম স্থান হিসাবে দখল করেছে আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারটি। অনেক সৌন্দর্য-পূর্ণ স্থাপনা থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করে তৈরি করা হয়েছে স্থাপনাগুলো বলে মনে করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষেরা।
সম্প্রতি গত মঙ্গলবার সকাল ৭ টার দিকে এক থেকে দেড় মাস পার হতে না হতে সদ্য নির্মিত সুন্দরবন উপভোগ করার মতো পায়ে হেঁটে চলার ২০০ ফুটের মতো ফিশিং স্পট, জেঠি ও ওয়াচ টাওয়ার উপরে উঠে সুন্দরবনের দৃশ্য ধারণ করা ফিশিং স্পর্ট ও জেঠি মুহূর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া যেন মেনে নিতে পারছেন না জনপ্রতিনিধিরা ও সাধারণ মানুষ। তাদের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন চলে আসছে ? সরকারি টাকা দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করে। অপরিকল্পিত ভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে মুহূর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়াকে কষ্টদায়ক মনে করছে।
তাছাড়া বাকি স্থাপনাগুলো আছে ঝুঁকির মধ্যে। সরজমিনে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু ভবতোষ কুমারের সাথে কথা বলে জানা যায়, আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের পরিচালনা কমিটির সদস্য আমি কিন্তু আমাদের অবগতি না করে ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করে উপজেলা প্রশাসন স্থাপনাগুলো নির্মাণ করেছে। আকাশ নীলার যেখান থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে পূর্বে থেকেই জায়গাটা নদী ছিল সরকারি টাকা ব্যয় করার আগে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে দীর্ঘস্থায়ীভাবে থাকবে কিনা এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে স্থাপনাগুলো তৈরি করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সভাপতি শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধারণ সম্পাদক প্রকল্প অফিসার সহ আমরা দুজন চেয়ারম্যান এই কমিটির মধ্যে আছি কিন্তু আকাশ নিলার কোন কাজ আমাদেরকে অবগতি না করে প্রশাসনিক ভাবে কাজ করে। নামে মাত্র কমিটিতে রাখা হয়েছে আমাদের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনজুরুল স্যার আমাদেরকে কমিটি করে একটা কাগজ দেয়া ছাড়া আজও পর্যন্ত কোন রেজুলেশন ও করা হয়নি।
আকাশলীনা ভাঙ্গনের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এটি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে করা হলে এ ধরনের ক্ষয় ক্ষতি হতো না বলে মনে করি। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য ডালিম ঘরামি বলেন, সরকারি বড় বড় প্রজেক্টগুলো দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নির্মাণ করা হয় কিন্তু আকাশ নীলায় সদ্য নির্মিত স্থাপনাগুলো সঠিকভাবে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তৈরি করা হলে এভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা নয়। সরকারি বড় বড় প্রজেক্ট গুলো দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা ভালো।
আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার ভাঙ্গনের পিছনে নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন কে দায়ী করে বলেন, মালঞ্চ তার আশপাশ নদী থেকে অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন করায় আকাশ নীলা ভাঙড়ের তার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন ওই জনপ্রতিনিধি। স্থানীয় আনিসুর রহমান জানান, জেটি গুলো নির্মাণের সময় ভাঙ্গনের একটি চিহ্ন দেখা গেলে বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে বলা হলে তিনি বলেন এ ভাঙ্গনে কোন সমস্যা হবে না। আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দেখা যায়।
দীপক মিস্ত্রি নামের ফেসবুক আইডি থেকে দেখা যায়, সঠিক দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করার কারণে ভাঙ্গন হয়েছে। সরকারি ৪০ লক্ষাধিক টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পীযূষ বাউলিয়া পিন্টুর ফেসবুক আইডি সহ একাধিক ফেসবুক আইডি থেকে একই ধরনের মন্তব্যঃ লক্ষ করা গেছে। আকাশ নীলা এর ভিতরে নির্মিত স্থাপন গুলো টেকসই দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আগের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন আমরা শুধুমাত্র তার সিডিউল অনুযায়ী কাজ করেছি আমরা বলতে পারব না টেকসই পরিকল্পনার জন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে কি না।
বাজেটের বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন, দুই কোটি টাকার বাজেটের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে শুধুমাত্র কিছু টাইলসের কাজ বাকি আছে। যে স্থাপনাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সেগুলোর ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা হবে।