বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে গর্ভবতী মা
বায়ুদূষণের ফলে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন গর্ভবতী মায়েরা। এমনকি শিশুরাও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দূষণ কমাতে না পারলে শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। এমনকি এই দূষণ যদি স্থায়ী হয় তাহলে শিশুদের ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে। গর্ভবতী মায়ের পেট থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি অটিস্টিক হতে পারে। পরিস্থিতি উত্তরণে বায়ুদূষণ কমাতে এখনই নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতি জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তারা বলছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫।
বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সাইদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, এখন অনেক বেশি রোগী আসছে। শিশুদের জন্য বায়ুদূষণ ভয়াবহ ক্ষতিকর। এখন প্রতিরোধ না করতে পারলে এটা মরণব্যাধিতে রূপ নিতে পারে। এখানে একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন কিছুই করার থাকে না। ফলে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
হেলথ ইফেক্টস ও হেলথ মেট্রিকসের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আগে বায়ুদূষণে সবার ওপরে ছিল চীন। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে চীনকে টপকে স্থানটি দখল করে নিয়েছে ভারত। চীন ও ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণ ও পরিবেশ ক্ষয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে নারী, শিশু ও দরিদ্র শ্রেণি। শহরের দশ লাখ দরিদ্র শ্রেণির মানুষ সিসাদূষণের কারণে এখন মারাত্মক ঝুঁঁকিতে আছে। এসব কারণে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে (আইকিউ) ও স্নায়বিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটের যুগ্মপরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, বায়ুদূষণের ফলে নিউরোলজিক্যাল ঝুঁকি ভয়াবহ। এর ফলে মানুষের মতিভ্রম হয়। বুদ্ধি হ্রাস পায়। শারীরিকভাবে একজন অক্ষম হয়ে যেতে পারেন। বিকলাঙ্গ হতে পারেন। এই ধরনের রোগী এখন বাড়ছে। ব্রেন বেঁচে থাকে অক্সিজেনের কারণে। সেটা না পেলে কীভাবে বেঁচে থাকবে। এটা এখন ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে অন্য সময়ের (এপ্রিল-অক্টোবর) চেয়ে শীতের সময় (নভেম্বর-মার্চ) বায়ুদূষণের মাত্রা (পার্টিকেল ম্যাটার বা পিএম ২.৫-এর নিরিখে) বাড়ে প্রায় পাঁচ গুণ। এ সময় বাতাসে সবচেয়ে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণিকা অস্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। অপেক্ষাকৃত স্থূল বস্তুকনিকা পিএম-১০ এর মাত্রাও অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি থাকে।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, বায়ূদূষণে প্রথমে চোখের ক্ষতি হয়। ধুলাবালি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে ধীরে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। এছাড়া দূষিত বাতাসে থাকা সিসা মানবদেহে প্রবেশ করে যে কোনো ধরনের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। বায়ুদূষণ মা ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্যও বড়ো ধরনের হুমকি।