খালেদার জামিন নিয়ে পরবর্তী শুনানি ৫ ডিসেম্বর

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন চেয়েছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

গত রোববার (২৫ নভেম্বর) শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আপিল বিভাগের সব সদস্য শুনবেন বলে বৃহস্পতিবার তারিখ ঠিক করেন প্রধান বিচারতি। হাইকোর্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়ার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করলে এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। চেম্বার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

আদালতে সেদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। উপস্থিত ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, মীর নাসির, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, কামরুজ্জামান মামুন, সগীর হোসেন, জহিরুল ইসলাম সুমন, এহসানুর রহমান প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে ১৭ নভেম্বর এ আবেদন উপস্থাপনের পর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান শুনানির জন্য ২৫ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ১৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ আবেদন করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। গত ৩১ জুলাই দুর্নীতির মামলায় অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করেন হাইকোর্ট।

এদিকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সে আবেদন এখনও আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।

২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে, তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সদ্যপ্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। এরপর চলতি বছর ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

এরপর ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর ফের জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)