কাঁটাতার পেরিয়ে ভারত থেকে দলে দলে নারী-পুরুষ ঢুকছে বাংলাদেশে
ভারতের আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকায় বাদ পড়ে ও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে গেল এক সপ্তাহে ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ অন্তত তিন শতাধিক নারী-পুরুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে আটক হয়েছে।
আটক এইসব অনুপ্রবেশকারীরা নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করে বলছে, তারা কাজের জন্য দীর্ঘদিন যাবত ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এনআরসি ঝামেলাসহ নানা নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড শুরু হলে সঙ্গে পাসপোর্ট-ভিসা না থাকায় দালাল ধরে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।
এরইমধ্যে গেল কয়েক দিনে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় শিশুসহ অন্তত ৩০০ নারী-পুরুষকে আটক করে বিজিবি। এর পর মহেশপুর সীমান্তে নিরাপত্তা আরও জোরদার হলে অনুপ্রবেশকারীরা পথ পরিবর্তন করে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। সেখানেও গেল কয়েক দিনে অনুপ্রবেশের সময় শিশুসহ অন্তত ২৭ জন নারী-পুরুষকে আটক করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হওয়া ব্যক্তিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নজরদারি চলছে। জোরদার হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ-৫৮ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক মেজর কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এনআরসি’সহ নানা কারণে সম্প্রতি ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। সীমান্তে আটক এসব অনুপ্রবশেকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনে মামলা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে অনুপ্রবেশ বন্ধে জীবননগর সীমান্ত সংলগ্ন নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি জিরো পয়েন্টের পাশ দিয়ে প্রতিনিয়ত টহল দিচ্ছে বিজিবি। স্থানীয় দালালরা অনুপ্রবেশকারীদের সহায়তা করছে। টাকার বিনিময়ে তাদের কাঁটাতারের বেড়া পাড় করে দিচ্ছে। গেল ক’দিনে অনেককে আটক করলেও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য এখনও সীমান্তের ওপারে অনেক ভারতীয় নাগরিক অপেক্ষা করছে। এসব অনুপ্রবেশকারীরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিতে চায়। তবে বিজিবি সর্বদা তৎপর রয়েছে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানিয়েছেন, তাদের অধীনে এখনও সীমান্ত এলাকাগুলোতে কোনও নারী-পুরুষ আটক হয়নি। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদা প্রস্তুত।
এদিকে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, জীবননগর সীমান্তের ৪টি পয়েন্ট দিয়ে গত কয়েকদিনে শিশুসহ অন্তত ২৭ জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিজিবি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
অনুপ্রবেশকারীদের বেশিরভাগেরই এক কথা- তারা এনআরসি আতঙ্ক ও নানা চাপ আর নির্যাতনের মুখে ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তারা আর ভারতে ফিরতে চান না। ভারতে তারা তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ফেলে এসেছেন। কিছু কিছু অন্য ধর্মাবলম্বী ছাড়া আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম।
এনআরসি জটিলতায় আসাম থেকে যেভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে তাতে করে ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত এলাকার স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যে চিন্তার ছাপ পড়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা শুরুতে কক্সবাজারের স্থানীয়দের কাছে আশ্রয় নিলেও পরে তারা যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে আসাম থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়েও ঠিক একইরকম দুর্ভাবনা আছে স্থানীয়দের।