চাল পেঁয়াজ সবজিতে ভোক্তার নাভিশ্বাস

পেঁয়াজের বাজার দুই মাস ধরে লাগামহীন। দাম কমতে শুরু করলেও সেই গতি খুবই ধীর। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছর এ সময় পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫-৪০ টাকা।

বরং দুই সপ্তাহ ধরে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল ৬-১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দরজায় শীত কড়া নাড়লেও সবজির দামেও আগুন। পর্যাপ্ত সরবরাহের পরও রাজধানীর খুচরা বাজারে সবজির দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী।

এদিকে ময়দার বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ময়দার দাম কেজিতে ৮ টাকা বেড়েছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলে প্রতি লিটারে ৫-১০ টাকা বেড়েছে।

তাছাড়া ডাল, ডিম ও আদা-রসুনের দামও বাড়তি। ফলে এসব খাদ্যপণ্য কিনতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।

ক’দিন আগে রাজধানীতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৬০-২৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায় পণ্যটি ৩০০ টাকা দরেও বিক্রি হয়।

তবে কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজের দাম কমছে। কিন্তু এখনও পেঁয়াজ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও রামপুরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা।

আমদানি করা মিয়ানমার ও মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৭০ টাকা কেজি। এছাড়া নতুন পাতাসহ দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকা।

পেঁয়াজের দাম নিয়ে সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, গত এক মাসে পণ্যটি গড়ে ৭৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। আর গত বছরের তুলনায় এ সময় পণ্যটি ৪০৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মিলারদের কারসাজিতে চালের বাজারও অস্থির। শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা।

যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪২-৪৪ টাকা কেজি। নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৮ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৪-৪৮ টাকা কেজি। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকায়।

যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৫ টাকা কেজি। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩২-৩৩ টাকা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন।

তারা একবার দাম বাড়ালে কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও সেগুলো তেমনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। যার কারণে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে।

এদিকে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকায়।

করলা প্রতি কেজি ১২০ টাকা, আধাপাকা টমেটোর কেজি ১২০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ টাকা, শিম ৭০-১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০-৭০ টাকা, পাতাকপি ৫০-৭০ টাকা, নতুন আলুর কেজি ১০০-১১০ টাকা, শসা ১২০ টাকা, ধনেপাতা ১৮০-২০০ টাকা, মুলার কেজি ৬০, গাজর ১২০ টাকা, শালগম ৮০ টাকা, সবুজ বরবটি ৬০ টাকা, লাল বরবটি ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা কেজি, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা কেজি, কচুরলতি ৬০ টাকা ও ধুন্দল ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে ডাল, ভোজ্যতেল, ময়দা, আদা-রসুন ও ডিমের দামও বেড়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি মসুরের ডাল (নেপালি) বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। যা আগে ১১৫ টাকা ছিল।

ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন তেল (পাঁচ লিটারের বোতল) বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে ৪৫০-৪৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতিলিটার বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়, যা দাম বাড়ার আগে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। বাজারে নতুন করে বেড়েছে ময়দার দাম।

কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে রাজধানীর বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ৩২ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া প্রতি কেজি রসুন কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকা।

আর আদা কিনতে ব্যয় হচ্ছে কেজিতে ১৯০-২০০ টাকা। এছাড়া এক হালি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়। যা একদিন আগেও ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়।

কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা সরকারি কর্মকর্তা এসএম রামিম আহমেদ বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ে আমরা এমনিতেই কাবু হয়ে আছি।

এর মধ্যে চালের দামও বেড়েছে। বাদ যায়নি সয়াবিন তেলও। বাড়তি দামের কারণে সবজিতে হাতই দেয়া যায় না। সবগুলো সবজির দামই চড়া। আমরা চাই বাজার তদারকি করে দাম কমানো হোক।

নয়াবাজারে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজারে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে জীবনযাপন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার টাকা থাকছে না। মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসারের জরুরি খরচ বাদ দিয়ে খাবারের জন্য যে টাকা রাখা হয়, তা দিয়ে পুরো মাস চালাতে পারছি না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতায় আসতে প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। চালের দামও কমে আসবে। এছাড়া তদারকির মাধ্যমে অন্যান্য পণ্যের দামও ভোক্তা সহনীয় করা হবে। তদারকির সময় অসাধু পন্থায় দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেলেই কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)