তিন সূর্যের দেখা মেলে পৃথিবীর এই স্থানে

সূর্যাস্ত কাছ থেকে দেখার আগ্রহ সবার মনেই রয়েছে। আর তাইতো সমূদ্র সৈকতে সবসময় ভীড় লেগেই থাকে! ধরুন সূর্যাস্ত দেখার জন্য সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেছেন। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে কমে আসছে। সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্ত আসছে, আপনার উত্তেজনাও বাড়ছে। হঠাৎ দেখলেন সূর্য আসলে একটা নয়, তিনটা সূর্য একইসঙ্গে অস্ত যাচ্ছে। 

হতবাক হয়ে গেছেন আপনি। ভেবে পাচ্ছেন না- তিনটার মধ্যে কোনটা আসল সূর্য? জেনে রাখুন, এখানে আসল নকলের কোনো ব্যাপার নেই, সান ডগস দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আপনার! নিশ্চয়ই খুব অবাক লাগছে? ভাবছেন কীভাবে দুটি সূর্য উদয় হলো? সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এখনই।

দেখা মিলছে তিন সূর্যের

দেখা মিলছে তিন সূর্যের

সান ডগস হচ্ছে গোধূলির প্রহরের এমন একটি মুহূর্ত যখন সূর্যের দু’পাশে সূর্যের মতই উজ্জ্বল আরো দু’টি আলোকপিন্ড দেখা যায়। এই মুহূর্তটিকে অনেক জায়গায় মক সানস বা ফ্যান্টম সানসও বলা হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে দু’পাশের এই আলোর প্রতিফলন থেকে থেকে বেরিয়ে আসা আলোর রেখা মিলে সূর্যের চারদিকে একটি অর্ধ গোলাকার রিং এর মত সৃষ্টি করে। এ এক অদ্ভুত অপার্থিব দৃশ্য। নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে সান ডগস কেন হয়?এবার সেই রহস্য উন্মোচন করবো আপনাদের সামনে। সাধারণত সূর্যের আলো দু’পাশের মেঘের মধ্যে জমে থাকা প্লেট আকৃতির ক্রিস্টাল বরফে প্রতিফলিত হওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। সূর্যের আলো যখন পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয় তখন যদি তা বাতাসে ভেসে বেড়ানো আইস ক্রিস্টালে পরে তখন তা ২২ ডিগ্রি কোণে প্রতিফলিত হয়। ফলে সূর্যের চারদিকে ২২ ডিগ্রি কোণ করে প্রতিফলিত আলো বলয়ের সৃষ্টি করে।

গোধূলী লগ্ন

গোধূলী লগ্ন

এজন্যই এই বলয় দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া আকাশের উপরে এই বলয় কখনো হতে পারে রঙ্গিন আবার হতে পারে সাদা রঙের। মাঝখানে সূর্য থাকবে আলোকচ্ছটার মত। তাই মনে হয় বুঝি দু’টি সূর্য একসঙ্গে পাশাপাশি অবস্থান করছে। পাশাপাশি দু’টি সূর্যের এই অপার্থিব দৃশ্য দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় বেশি স্পষ্ট দেখা যায়।সান ডগসকে অনেকেই তাই অ্যাটমোস্ফিয়ারিক ইলিউশন বলে থাকেন। সাধারণত শুষ্ক জলবায়ুর দেশগুলোতে, বিশেষ করে শীতকালে মাঝে মধ্যে আকাশে সান ডগস এর দেখা মিলে। তবে কোনো সান ডগস খুব বেশিক্ষন স্থায়ী হয়না। গ্রিস, ইতালি, মেসিডোনিয়া, সুইডেনসহ মধ্য ইউরোপের অনেক দেশে এই দৃশ্য দেখা যায়।

অসাধারণ দৃশ্য

অসাধারণ দৃশ্য

তবে সান ডগস কিন্তু নতুন কোনো ঘটনা নয়! অনেক আগে থেকেই পৃথিবীতে সান ডগস দেখা যেত। এমন কি প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক অ্যারিস্টটল তার ‘মিটিওরলজি ৩’ বইয়ে সান ডগস এর কথা উল্লেখ করেছেন। বইতে তিনি একে ‘দুটি নকল সূর্য’ বলে চিহ্নিত করেছেন। এছাড়া প্রাচীন রোমেও সীস্যারো তার ‘অন দা রিপাব্লিক’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন এটা সম্পর্কে।সান ডগস নিঃসন্দেহে প্রকৃতির সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। তবে দুর্ভাগ্যবশত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এশিয়ান দেশগুলোতে সান ডগস দেখার সৌভাগ্য হবে না। তবে আপনি যদি কখনো ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে ভ্রমণে যান, তাহলে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের সময়ে অবশ্যই সমুদ্র তীরে বেড়াতে যাবেন। বলা তো যায় না, হয়তো সান ডগসের দেখা পেয়েও যেতে পারেন!

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)