অভিযানের পর পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৭০ টাকা

অবশেষে রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ কিছুটা কমেছে। নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় ও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে গত দু’দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দাম কমেছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। আমদানি করা চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। 

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, এরইমধ্যে বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি পেঁয়াজের কারসাজিকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। এসব কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে। দাম কমার এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

ব্যবসায়ীরা আরো জানান, চড়া দামের কারণে ঘরে ঘরে এখন পেঁয়াজের ব্যবহার কমে গেছে। এতে বাজারগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম।  এ কারণে পেঁয়াজের ঝাঁজ আজ কিছুটা কমে গেছে।

সোমবার রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। মিসর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। কেজি প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। এ বাজারে পাইকারি দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। দু’দিন আগেও এর দাম ছিল ২১০ থেকে ২৩০ টাকা। নতুন দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা চায়নার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠেছে। এ পেঁয়াজ পাইকারিতে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এসব পেঁয়াজের চালান দেশে এলে দাম আরও কমে যাবে।

এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও এখনও পুরোপুরি প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। রাজধানীর মতিঝিল, খিলগাঁও, মুগদা, সেগুনবাগিচা, ধানমন্ডি এলাকার বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

এছাড়া ক্রেতা না থাকায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দামও কমতে শুরু করেছে। সোমবার মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক দিন আগে রোববার বিকেলে তা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরায় এখনো ২০০ টাকার বেশি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, তাঁরা বেশি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। পাইকারিতে দাম কমায় খুচরায়ও এক-দুদিনের মধ্যে দাম কমবে।

পাবনার ফড়িয়া পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল থেকে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে ওঠায় বড় আড়তদাররা পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছে। রোববার আড়তে পুরান পেঁয়াজ কিনেছি ৫ হাজার ৯০০ টাকা মণ, আর নতুন পেঁয়াজ ৪ হাজার টাকায়। কেজি প্রতি নতুন পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা আর পুরান পেঁয়াজ দেড়শ টাকা পড়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, পেঁয়াজের আড়ত, মোকাম, পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযানের পাশাপাশি সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে দাম কমেছে। পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সূত্র জানায়, পেঁয়াজের সংকট মোকাবিলায় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। এছাড়া মিসর থেকে কার্গো বিমানযোগে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। যার প্রথম চালান ঢাকায় পৌঁছাবে মঙ্গলবার।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর পরই অস্থির হয়ে ওঠে দেশের পেঁয়াজের বাজার। ৬০ থেকে ৭০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে শতক ছাড়ায়। এরপর বাজারে দাম বাড়তে বাড়তে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল পেঁয়াজ। চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর হঠাৎ করেই আবার দাম বাড়তে থাকে। দুই দিনের মধ্যে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ বেড়ে ২০০ টাকার ওপরে উঠে যায়। খুব দ্রুতই দাম আড়াইশ’ টাকার কাছাকাছি চলে আসে।

সূএ: ডেইলি বাংলাদেশ

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)