উইন্ডোজের সহায়ক বিনামূল্যের কয়েকটি সফটওয়্যার
পিসি ব্যবহারকারীর বড় একটি অংশই অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন মাইক্রোসফটের উইন্ডোজের বিভিন্ন সংস্করণ। উইন্ডোজে নানান কাজের জন্য নানান সফটওয়্যার পাওয়া যায়। তবে অনেক সময়ই প্রয়োজনের সফটওয়্যাারগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। আবার ওপেন সোর্স অনেক সফটওয়্যারই সকলের জন্য পাওয়া যায় বিনামূল্যে। নানান কাজের এরকম কিছু সফটওয়্যার নিয়ে লেখা হলো এখানে।
ডেস্কটপের ভিডিও ধারণে ‘ক্যামস্টুডিও’
অনেক সময় আমাদের ডেস্কটপে চলমান সব ঘটনার ভিডিও ধারণ করার প্রয়োজন হতে পারে। ওয়েবক্যামের মাধ্যমে এ কাজটি করা গেলেও ওয়েবক্যাম ছাড়াও কাজটি করা যায় ‘ক্যামস্টুডিও’ সফটওয়্যারটির মাধ্যমে। ডেস্কটপের যেকোনো অংশেই ধারণ করা যায় এতে। বিশেষ করে কোনো সফটওয়্যারের ডেমনেস্ট্রেশন বা কোনো ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি বা এই ধরনের কাজে এটি হতে পারে চমত্কার একটি সফটওয়্যার। এর সাহায্যে ধারণকৃত ভিডিওটি পাওয়া যাবে হাই-রেজ্যুলেশন এভিআই ফরম্যাটে। তবে বিল্ট-ইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে তা এসডাব্লিউএফ ফরম্যাটেও রূপান্তর করা যায়। ভিডিও ধারণের সাথে সাথে এতে মন্তব্য যোগ করার সুযোগও রয়েছে। পুরো স্ক্রিনের পাশাপাশি ডেস্কটপের নির্দিষ্ট কোনো অংশের ভিডিও ধারণ করতে চাইলে সেটাও সম্ভব এর মাধ্যমে। এর হেল্পফাইলটিও তৈরি করা হয়েছে খুব সহজভাবে, যাতে যে কেউ যেকোনো সমস্যায় পড়লে তত্ক্ষণাত্ তার সমস্যাটির সমাধান খুঁজে পেতে পারেন। ওপেন সোর্স এই কাজের সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করা যাবে camstudio.org সাইট থেকে। আর camstudio.org/forum লিংকে গেলে পাওয়া যাবে ক্যামস্টুডিও সাপোর্ট ফোরাম। যেকোনো সমস্যা থাকলে জানালে এখান থেকেও সমাধান খুঁজে পাবেন সহজেই।
অন্য পিসির নিয়ন্ত্রণে ‘ক্রসলুপ’
মনে করুন, কম্পিউটারে কাজ করতে গিয়ে আপনি কোথাও আটকে গেছেন। আর আপনার একজনই বন্ধু আছে যে এই জায়গায় আপনাকে সহায়তা করতে পারে। তবে সে আপনার থেকে অনেক দূরে কোথাও অবস্থান করছে। ফলে উপস্থিত হয়ে সে আপনাকে সাহায্য করতে পারছে না। এই অবস্থায় আপনার সহায় হতে পারে ‘ক্রসলুপ’ সফটওয়্যারটি। আপনাদের উভয়ের পিসিতে সফটওয়্যারটি ইন্সটল করা থাকলে আর উভয় কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে আপনার বন্ধু ওই দূর থেকেই প্রবেশ করতে পারবে আপনার কম্পিউটারে, আর করে দিতে পারবে আপনার কাজটি। বিনামূল্যের এই সফটওয়্যারটি মূলত ডেস্কটপ শেয়ারিং এবং রিমোট অ্যাকসেস সফটওয়্যার, যা এক পিসি থেকে অন্য পিসিতে ঢুকে কাজ করার সুবিধা প্রদান করে থাকে। উইন্ডোজের পাশাপাশি ম্যাক সিস্টেমও সমর্থন করে সফটওয়্যারটি। বিনামূল্যের পাশাপাশি এটির প্রফেশনাল সংস্করণ টাকা খরচ করে ব্যবহার করা যায়, যাতে রয়েছে বাড়তি সব ফিচার। তবে ব্যক্তিগত নানা প্রয়োজনে বিনামূল্যের সফটওয়্যারটিই যথেষ্ট। www.crossloop.com সাইট থেকে নামিয়ে নিতে পারবেন ‘ক্রসলুপ’।
একাধিক ডেস্কটপের জন্য ‘ডেক্সপোট’
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম একটিমাত্র ডেস্কটপেই সব কাজ সারতে হয়। তবে যারা নিজেদের কাজের জন্য একাধিক ডেস্কটপ ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য উইন্ডোজের নিজস্ব কোনো বিল্ট-ইন ব্যবস্থা নেই। একাধিক ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ব্যবহার করতে চাইলে এ ক্ষেত্রে সহায় হতে পারে ডেস্কপোট। মাল্টিটাস্কিংয়ে অভ্যস্তদের প্রায়ই দেখা যায় তার ওপেন করা অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে টাস্কবার পূর্ণ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ডেস্কটপ ব্যবহারকে অনেকেই সুবিধাজনক মনে করে থাকেন। তাদের জন্যই ‘ডেক্সপোট’-এ রয়েছে চারটি ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ব্যবহারের সুবিধা। প্রতিটি ডেস্কটপ ব্যবহার করলে মনে হবে যেন নতুন নতুন পিসি ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে আলাদা আলাদা ডেস্কটপে আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম রান করানো যায়। আর কি-বোর্ড শর্টকাটের মাধ্যমেই এক ডেস্কটপ থেকে অন্য ডেস্কটপে সহজেই সুইচ করা যায়। বিশেষ করে যাদের ছোট স্ক্রিনের ল্যাপটপে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর হবে। এর ডেস্কটপগুলোর একটি থেকে আরেকটিতে যেতে রয়েছে নানান ধরনের থ্রিডি ট্রানজিশন ইফেক্ট। এর ডেস্কটপগুলোতে নানান ডিজাইনও ব্যবহার করা যায়। dexpot.de থেকে ডাউনলোড করা যাবে এই সফটওয়্যারটি।
হার্ডড্রাইভের তথ্য মুছতে ‘ইরেজার’
সময়ের সাথে সাথে আমরা পুরোনো কম্পিউটার বা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ বিক্রি করে দিতে পারি। সেক্ষেত্রে সেইসব হার্ডডিস্কে আমাদের ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই থাকতে পারে যা অন্যদের কাছে যাওয়াটা নিজেদের জন্য ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে। কম্পিউটারে আমাদের আর্থিক লেনদেন বা অনেক সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যও থাকতে পারে, যা অন্যদের হাতে গেলে সেটা সুখকর হবে না। এসব ফাইল পিসি থেকে ডিলিট করে দিলেও ডাটা রিকভারি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেগুলোকে আবার উদ্ধার করা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে, অর্থাত্ হার্ড ড্রাইভের তথ্যকে হার্ডডিস্ক থেকে পরিপূর্ণভাবে মুছে দিতে রয়েছে ‘ইরেজার’ নামের সফটওয়্যারটি। এটি এমনভাবে পুরো হার্ডডিস্কের সব তথ্য অথবা নির্বাচিত কিছু তথ্যকে মুছে দেয়, যাতে করে ডাটা রিকভারি সফটওয়্যারের মাধ্যমে এগুলোতে আর অ্যাকসেস না পাওয়া যায়। উইন্ডোজের যেকোনো সংস্করণেই কাজ করে এটি। আর উইন্ডোজ সমর্থিত যেকোনো ইন্টারনাল হার্ডডিস্ক, এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক বা ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভের ক্ষেত্রেও কাজ করে এই সফটওয়্যারটি। তাই নিজের তথ্যের নিরাপত্তায় ব্যবহার করতে পারেন বিনামূল্যের ইরেজার। eraser.heidi.ie থেকে নামিয়ে নিতে পারবেন এটি।
পাসওয়ার্ড সংরক্ষণে ‘কিপাস’
ইন্টারনেটের এই যুগে এসে আমাদের প্রচুর অনলাইন অ্যাকাউন্ট চালাতে হয়। ই-মেইল অ্যাকাউন্ড, সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর অ্যাকাউন্ট, ব্লগের অ্যাকাউন্ট, অন্যান্য নিবন্ধিত সাইটের অ্যাকাউন্টসহ নানান ধরনর অ্যাকাউন্টে নানান পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার পাসওয়ার্ডগুলো যাতে কেউ সহজে অনুমান না করতে পারে, সেজন্য প্রতিটি পাস ওয়ার্ডকেই করতে হয় ব্যতিক্রমী। এই কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় অনেকেই কম ব্যহার করা পাসওয়ার্ডগুলো ভুলে যান। অথচ একটিমাত্র পাসওয়ার্ড মনে রেখেই নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায় সব পাসওয়ার্ড। ‘কিপাস’ নামের পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। বিনামূল্যের পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মধ্যে এটি একটি সেরা সফটওয়্যার। এটি পিসিতে ব্যবহূত সব ধরনের পাসওয়ার্ডকে শক্তিশালী এনক্রিপশনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে পারে। এতে রয়েছে বহনযোগ্যতা, মাল্টি ইউজার সুবিধা, একাধিক ভাষা সমর্থনসহ নানান সুবিধা। keepass.info থেকে ডাউনলোড করা যাবে এটি।