দেবহাটাতে ঘের দখলে নিতে মধ্যরাতে হামলা, ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ; এলাকা জুড়ে আতঙ্ক
দেবহাটার সখিপুরে মাদার গাজী ও বাবুরালী গাজী নামের আপন দুই ভাইয়ের মধ্যকার বিবদমান একটি মৎস্যঘের দখল পাল্টা দখল নিয়ে গত কয়েকদিনে দু পক্ষের শতাধিক ভাড়াটে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় গোটা এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলার উত্তর সখিপুর পিলেরমাঠ এলাকায় অবস্থিত ওই মৎস্য ঘেরটি দখলে নিতে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্তও কয়েকটি ইঞ্জিনভ্যানে আসা একপক্ষের শতাধিক ভাড়াটে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ঘেরের বাসা ভাঙচুর ও পরপর কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে।
এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিৎকার আর দাপাদাপিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ঘুমিয়ে থাকা এলাকার সাধারণ মানুষ। সন্ত্রাসীরা এসময় বিনাকারনে এবাদুল ইসলাম (৩২) নামের স্থানীয় এক যুবককে মারপিট করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। খবর পেয়ে দেবহাটা থানা পুলিশের একটি দল রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এসময় ঘটনাস্থল থেকে দুটি ইঞ্জিনভ্যান ও বেশ কিছু লাঠিশোটা উদ্ধার করে পুলিশ। এলাকাবাসী জানায়, দেবহাটার উত্তর সখিপুর পিলেরমাঠ এলাকার এক একর চার শতক জমির একটি মৎস্য ঘেরের দখল নিয়ে আপন দুই ভাই মাঝ সখিপুর গ্রামের মৃত বশির গাজীর দুই ছেলে মাদার গাজী ও বাবুরালী গাজীর পরিবারের মধ্যে তীব্র বিরোধ চলে আসছিলো।
বিষয়টি নিয়ে আদালতেও মামলা চলছিলো দু’পক্ষের। সম্প্রতি মামলাটি খারিজ হওয়ায় আদালতের রায় চলে যায় মাদার গাজীদের পক্ষে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে আপীল করে অপর ভাই বাবুরালী গাজীর পরিবার। এরই মধ্যে গত সোমবার (৪ নভেম্বর) ভোররাতে মাদার গাজীর পরিবারের পক্ষে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিশোটা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে মৎস্য ঘেরটির দখল নেয়। সেসময়েও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। ওই রাতে আবার মৎস্য ঘেরটিতে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। এতে করে একটি মামলাও হয় দেবহাটা থানায়। তিনদিন মৎস্য ঘেরটি মাদার গাজীর পরিবারের দখলে থাকার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বাবুরালী গাজীর পরিবারের পক্ষ থেকে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অতর্কিত পাল্টা হামলা চালিয়ে ঘেরের বাসা ভাংচুর, কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি সহ মৎস্য ঘেরটি ফের দখলে নেয়।
ঘের দখলকালে ওই পথ দিয়ে বাড়ী ফেরা যুবক এবাদুলকে বেধড়ক মারপিট করে সন্ত্রাসীরা। কিন্তু খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর ঠিক আগ মুহূর্তেই গোটা এলাকাকে আতঙ্কিত করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বাবুরালীর পক্ষের সন্ত্রাসীরা। পরে ভোররাত থেকে আবারো লাঠিশোটা নিয়ে ঘেরটি দখলে নেয় মাদার গাজীর লোকজন। মৎস্য ঘের দখল নিয়ে আপন দুই ভাই মাদার গাজী ও বাবুরালী গাজীর পক্ষের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় একদিকে যেমন গোটা এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে, অন্যদিকে তেমনি তীব্র ক্ষুদ্ধ এলাকার সকল শ্রেণি পেশার শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ। এমনকি তীব্র প্রয়োজন হওয়া সত্ত্বেও সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে রাতের বেলা ঘর থেকে বের হতে পারছেনা স্থানীয়রা। পাশাপাশি যেকোন মুহূর্তে দুপক্ষের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা। তাই এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, প্রত্যেক বারই সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি ও হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর আগেই সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসা দুটি ইঞ্জিনভ্যান ও বেশ কিছু লাঠি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে পুলিশ সদস্যরা। এঘটনার পরপরই শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পেনাল কোডের ১৫৪ ধারামর্তে উভয় পক্ষকে সতর্কীকরণ নোটিশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের নোটিশ উপেক্ষা করে কোন পক্ষ ওই এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটালে তাদেরকে কঠোর ভাবে দমন করা হবে বলেও জানান ওসি।