ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিষিদ্ধ ঘোষণা

ভারতের বেঙ্গালুরুর অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোতে বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগদান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে শহরটির পুলিশ। 

এদিকে বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকদের ধরতে বেঙ্গালুরু পুলিশের চালানো সাম্প্রতিক অভিযানের জেরে বিপদে পড়েছেন সেখানে কর্মরত সকল বাংলাভাষী শ্রমিকই।

দক্ষিণের এই শহরের বেশ কয়েকটি আবাসনে বাংলাভাষী কাজের লোক না রাখতে ফ্ল্যাট মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শহরের প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ এলাকাগুলোয় বাংলাদেশি সন্দেহে বাংলাভাষী গৃহকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী ও অন্যান্য শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া বন্ধ হচ্ছে। বিভিন্ন ভবন ও প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা শ্রমিক প্রদানকারী সংস্থাগুলোয় এমন শ্রমিক না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

শহরের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সগুলোয় এমন সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ভারত সরকারের কথিত দমন প্রচেষ্টা। ভবন মালিকেরা বাংলাদেশি নিয়োগ দিয়ে আইনি জটিলতার শিকার হতে চাইছে না। স্থানীয়রা বাংলাভাষী ও বাংলাদেশিদের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারায় তাদের এর ভুক্তোভুগী হচ্ছেন ভারতীয়রাও।

সোমবার থেকে একটি অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পরিকল্পনার পর থেকে কাহুবেসনাহল্লি, কোরামঙ্গালা, এইচএসআর লেআউট, সোমসুন্দর পালা, পানাথুর, সরজাপুর রোড, কুন্ডলাহল্লি এবং তুবারহল্লি সীমাতে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট বাসিন্দাদের মধ্যে ডিএইচ প্রবেশাধিকারী, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বন্ধ করা হয়।

বেঙ্গালুরু অ্যাপার্টমেন্ট ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট মূরলীধর রাও জানিয়েছেন যে, ফেডারেশনের থেকে বাংলাভাষীদের নিষিদ্ধ করার কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। এই সিদ্ধন্তের কারণে অনেক শ্রমিকের জীবন পাল্টে যাবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করছি। কিছু অ্যাপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ এমনটা করেছে। কারণ প্রত্যেক অ্যাপার্টমেন্টই নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখে। হয়তো তারা নিজে থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গৃহকর্মী ইউনিয়ন অনুসারে, বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে প্রায় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার বাঙালি রয়েছে, যাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকেরাই গৃহপরিচালনা বা রান্নার কাজে নিয়োজিত।

বেঙ্গালুরুর বাঙালিরা জানিয়েছেন, তাদের সব দিক থেকে ভুল বোঝা হচ্ছে। উপেক্ষা করা হচ্ছে তাদের অস্তিত্বকে।

বেঙ্গালুরুর মারাঠাহালিতে রোহান বাসান্থা অ্যাপার্টমেন্টের এক বাঙালি বাসিন্দা দেবায়ানি বসু জানান, রোববার এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমাদের এপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান আমাদের বাঙালি শ্রমিক নিয়োগ না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের মালিক বলেছেন, যদি আমরা বাঙ্গালি শ্রমিকদের নিয়োগ দেই তাহলে আমরাই ঝুঁকিতে পড়বো।

তিনি আরো বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভাষার মধ্যে অনেক মিল পাওয়া যায়। এই ভাষার মিলগত মিলের কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশি ও ভারতীয় বাঙালির মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে।

রোহান বাসান্থা এপার্টমেন্ট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রভু পাটিল বলেন, ভবনে অনেক বাঙালি পরিবার থাকেন। তাদের বেশির ভাগ লোকই বাংলাদেশি গৃহকর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ওইসব শ্রমিকদের সব নথিপত্র সংগ্রহ করতে বলেছি। এমনকি আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্যও সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)