সুন্দরবনে দুবলারচরে রাস উৎসবকে ঘিরে হরিণ শিকারি চক্র তৎপর আটক ৬০
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সাগর পাড়ে দুবলার চরে ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবকে ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছে হরিণ শিকারি চক্র। ৩ দিনব্যাপী রাস উৎসবে দেশি-বিদেশি পূণ্যার্থী ও পর্যটকদের আড়ালে সুন্দরবনে ঢুকে পড়ে হরিণ শিকারি চক্র। এভাবে সুন্দরবনে যাবার পথে মঙ্গলবার ভোরে চাঁদপাই রেঞ্জের জয়মনি এলাকা থেকে ৩টি ট্রলার ও হরিণ শিকারের ফাঁদসহ ৬০ জন শিকারিকে আটক হয়েছে বনরক্ষকদের হাতে।
আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে হরিণ শিকারের ফাঁদ, দা, কুড়াল ও চুলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। এবার রাস উৎসবকে ঘিরে সুন্দরবনের বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পূণ্যার্থী ও পর্যটকদের যাতায়াতে ৮টি রুট নির্ধারণসহ চার দফা পূর্ব সতর্কতা জারি করেছে বন বিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, আগামী ১০ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। রাস মেলা উপলক্ষে হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে এই দলটি সুন্দরবনে প্রবেশ করে। আটক ৬০ জন শিকারিদের কাছে সুন্দরবনে প্রবেশের কোন পাস পারমিট নেই।
ডিএফও আরও বলেন, এবারের রাস মেলা উপলক্ষে সুন্দরবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগের সঙ্গে নৌবাহিনী, র্যাব, কোস্ট গার্ড, পুলিশের পাশাপাশি বনরক্ষকরাও নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়া, কন্ট্রোল রুমে সার্বক্ষণিক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। এবার রাস উৎসবের নিয়মাবলীতে একটু ভিন্নতা আনা হয়েছে। অন্যান্য বছরগুলোতে পুণ্যার্থীরা রাতের বেলায় রওনা হতো। কিন্তু এবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে ১০ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকেই তারা যাত্রা শুরু করবে। এবার রাস মেলাকে ঘিরে হরিণ ও অন্যান্য বন্য প্রাণী শিকার রোধে বন বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি রাখবে। পূর্ব সুন্দরবন চাদপাই ক্যাম্পের ইনচার্জ কামরুল হাসানের নেতৃত্বে মঙ্গলবার ভোরে বনের নন্দবালা খাল সংলগ্ন নদী থেকে তিনটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারসহ তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, হরিণ শিকারের ফাঁদ ও নিষিদ্ধ জাল জব্দ করা হয়। আটককৃত সকলেই বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্বা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিন কবির জানান, বন বিভাগের নিয়মিত টহলের সময় তাদের আটক করা হয়। বন বিভাগের অনুমতিবিহীন তারা অসৎ উদ্দেশে বনে প্রবেশ করতেছিলেন। তাদের নিকট থেকে হরিণ স্বীকারের নানা রকম সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়। আটককৃতদের বন আইনে সাজার ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে পরবর্তীতে সুন্দরবনে কোন পাচারকারী অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে দিকে তাদের নজরদারী থাকবে বন বিভাগের।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর বাগেরহাট জেলার আহ্বায়ক মো. নুর আলম শেখ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও রাস মেলাকে টার্গেট করে চোরা শিকারির দল হরিণ ও অন্য বন্যপ্রাণী নিধন করতে পারে। তিনি এ ব্যাপারে বন বিভাগসহ প্রশাসনের নজরদারি আরও জোরদার করার আহ্বান জানান।
রাস উৎসবের আয়োজক কমিটির সভাপতি কামালউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ধর্মভীরু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দুবলার মেলায় মানত করে এবং বছরের এ সময় এসে মানতকারীরা আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করে থাকে। আবার কেউ কেউ জীবনের কৃত পাপ মোচন হবে মনে করে এ স্থানে আসে এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের মধ্যে স্নান করে পূত-পবিত্র হতে দেখা যায়। এ সময় মন্ত্রাদি উচ্চারণ করে পাঁঠা, ছাগল, ফল ও মিষ্টি সাগরে নিক্ষেপ করতে দেখা যায় ভক্তদের।
বন বিভাগ জানায়, দুবলার চরেন আলোর কোলে রাস উৎসবে আগতদের যাতায়াতের জন্য সুন্দরবন বিভাগ আটটি রুট নির্ধারণ করছে। প্রত্যেক পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থী তিন দিন সুন্দরবনে অবস্থানের জন্য ৫০ টাকা, নিবন্ধিত ট্রলার ২০০ টাকা এবং অনিবন্ধিত ট্রলারে ৮০০ টাকা রাজস্ব ধরা হয়েছে।