নতুন সড়ক আইনে প্রথমই হার্ডলাইনে নয়
নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রথম দিন রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা ছিল বেশ কম। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় যান চলাচল এমনিতেই কম থাকে। রোববার থেকে পাওয়া যাবে প্রকৃত চিত্র। এদিকে যানবাহন চালকদের অনেকেই জানেন না নতুন এই আইন কার্যকরের বিষয়টি। অন্যদিকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের মতে, প্রথমেই হার্ড লাইনে যেতে চাচ্ছেন না তারা, জনসাধারনকে সচেতন করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
শুক্রবার রাজধানীর সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল, ফার্মগেট, বাংলামোটর, আসাদগেট, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেশ কম। নতুন আইনের কারনেই এই প্রভাব কি না জানতে চাইলে সায়দাবাদ থেকে গাজীপুর রোডে চলাচলকারী বলাকা পরিবহনের চালক ইদ্রিস মোল্লা জানালেন ভিন্ন কথা। তার মতে,শুক্রবার এমনিতেই যাত্রী কম থাকে। তাই রাস্তায় গাড়িও চলে কম। নতুন আইনের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, শুনেছি এরকম একটা আইন নাকি হবে। তবে কবে হবে তা জানি না।
তার মতো একই মন্তব্য করেন,গাবতলী রোডে চলাচলকারী ৮ নম্বর বাসের চালক খোকন। তিনি বিস্মিত কণ্ঠে বলেন, তাই নাকি! জানিনা তো। আজ থেকে এইটার কাজ শুরু হইছে? তবে তিনি আত্মবিশ্বাসের শুরে বলেন, “আমগো সমস্যা নাই। আমগো অরজিনাল লাইসেন্স আছে।” তবে অনেক চালকই ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহার করে গাড়ি চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
শাহবাগে কথা হয় সিএনজি অটোরিকশা চালক সোহেলের সঙ্গে। তিনি জানান, অন্যন্য শুক্রবারে তুলনায় আজ তিনি বেশি ট্রিপ পেয়েছেন। কেনো জানতে চাইলে বলেন, অনেক চালকেরই বৈধ লাইসেন্স নেই। তাই গাড়ির মালিক তাদেরকে গাড়ি দেয়নি। আবার অনেক চালক নিজে থেকেই গাড়ি নিতে চাননি। তাই রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা আজ কম থাকায় বেশি ট্রিপ পাচ্ছেন।
নতুন আইনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী সব বৈধ কাগজ থাকলে ভয় কিসের! তবে তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, দেখবেন ট্রাফিক পুলিশ তারপরও ঝামেলা করছে। নানান বাহানায় টাকা নিচ্ছে।
টিকাটুলি মোড় থেকে সায়েদাবাদ যাওয়ার জন্য মেয়েকে নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মনির হোসেন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। রোদের মধ্যে অপেক্ষা করে ক্লান্ত মনির হোসেন জানান, অনেকক্ষণ ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন কিন্তু পাচ্ছেন না। নতুন সড়ক আইনের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বাস না আসার ব্যাখ্যা খুঁজে পান। বলেন-“তাইতো বলি কোনদিন তো এতোক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। একটার পর একটা বাস আসতেই থাকে।”
এসব বিষয়ে কথা হলে তেজগাঁও কলেজের সামনে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট রাসেল জানান, শুক্রবার যানবাহন চলাচল কম থাকলেও আজকে আনুপাতিকহারে আরো কম ছিল। নতুন আইনের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। তার মতে, যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই বা গাড়ির বৈধ কাগজ নেই, তারা হয়তো আজ গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে সাহস পাননি। আর তাই গাড়ির সংখ্যাও ছিল কম। তবে তিনি জানান, শুধু জরিমানা করেই কাউকে সংশোধন করা যায় না। এতে ওই ব্যক্তি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই অমরা প্রথমে তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করছি যেন তিনি সংশোধন হন, বৈধ কাগজ নিয়ে রাস্তায় নামেন। পরবর্তীতে আমরা মামলা করছি, যাতে আর্থিক ক্ষতির কথা স্মরণ করে তিনি বৈধ কাগজ করে নেন।