পাটকেলঘাটায় জামায়াত-শিবির কর্তৃক সরকারি সড়ক ও জনপদের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা

পাটকেলঘাটার খুলনা-সাতক্ষীরা মহা সড়কের পল্লী-বিদ্যুৎ অফিসের সদর দপ্তরের সামনে সরকারি (সওজ) বিভাগের সম্পত্তি দখলের মহা উৎসবে মেতে উঠেছে স্থানীয় জামায়াত শিবির নেতা কর্মীরা। শুক্রবার সকাল ৮ টার সময় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এই দখলবাজদের সচিত্র।

স্থানীয়রা জানান, থানাধীন তৈলকুপী গ্রামের রহিম গাজীর ছেলে জামায়াত নেতা ও ডিআইজি আলিম মাহামুদ’র খালাত ভাই পরিচয়দানকারী চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যূ আশরাফ গাজী ও তার সহযোগী সাংবাদিক নামধারী শিবির সভাপতি একই গ্রামের মোসলেম গাজীর ছেলে হাসানুর রহমান এর নেতৃত্বে আশকার বাহিনী এ দখল যজ্ঞ চালায়।

জানা যায়, উক্ত জামায়াত নেতা আশরাফ গাজী প্রতারনা ও জালিয়াতির মাধ্যমে তালা উপজেলার সুজনসাহা গ্রামের মৃত আফাজউদ্দীন শেখ এর ছেলে লুৎফর রহমান এর কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে উক্ত (সওজ) এর সম্পত্তির জাল কাগজপত্র দেখিয়ে বিক্রয় করে। পরবর্তীতে উক্ত স্থানে ১টি টিন সেটের ঘর নির্মাণ করে জনৈক লুৎফর রহমানের কাছে দখল বুজিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশরাফ গাজী আমাকে উক্ত জায়গার কাগজপত্র দিয়ে আমার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে উক্ত জায়গা আমাকে ভোগদখল করতে বলে। আমি এখন চরম প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। আমি কি করব তা ভেবে পাচ্ছিনা। সাংবাদিকরা উক্ত সম্পত্তির কোন কাগজপত্র আছে কিনা তা জানতে তিনি তা দেখাতে ব্যার্থ হন।

এ বিষয়ে সরুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (ইউএলও) আব্দুল আমিন খাঁন চৌধুরী জানান, উক্ত সম্পত্তি সরকারি সড়ক ও জনপদ বিভাগের হওয়ায় স্থানীয়রা ঘটনার সময় আমাকে জানালে আমি তাৎখনিকভাবে এসিল্যান্ড স্যারকে অবগত করে, ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় দখল যজ্ঞ বন্ধ করে দিই।

বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক নামধারী শিবির সভাপতি হাসানুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, উক্ত সম্পত্তি সরকারি নয়। আমার এবং আশরাফ ভাইয়ের কাছে সকল প্রকার বৈধ কাগজ পত্র আছে। আপনারা এত বাড়াবাড়ি করছেন কেন ?
এ বিষয় নিয়ে আশরাফ গাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এই সম্পত্তি আমার না তবে সম্পত্তির মালিক আমার প্রতিবেশী হেকমত গাজীর ছেলে আশকার গাজী। শুনেছি কিছুদিন আগে ঐ সম্পত্তি নাকি তালা উপজেলা সুজনসাহা গ্রামের জনৈক মৃত আফাজ উদ্দীন শেখ এর ছেলে লুৎফর রহমান এর কাছে বিক্রি করেছে। এই সম্পত্তির বিষয়ে আমার সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

ঘটনার বিষয় নিয়ে তালা উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আশরাফ ও হাসানের মত বাটপার, চাঁদাবাজ পাটকেলঘাটা থানায় আর কেউ নেয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য পত্র পত্রিকায় একাধিকবার সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। বর্তমানে তারা সাংবাদিক পরিচয় ও ডিআইজি আলিম মাহমুদের ভাই পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসানুর রহমান এর নামে ডজন খানেক নাশকতা মামলা সহ ওসির উপর হামলার মামলা এখনও চলমান রয়েছে। তাছাড়া আশরাফ গাজী ডিআইজি আলিম মাহামুদের নাম ভাঙ্গীয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজী, সরকারি জমি দখল ও ঘের দখল করা সহ বিভিন্ন অপকর্মের করে আসছে। জানিনা তারা কোন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। কিছুদিন আগে বড়বিলা গ্রামের জনৈক হাসেম আলীর ছেলে ফরিদ হোসেনর চায়ের টল দোকানটি রাতের আধারে চুরি করে নিয়ে যায়। উক্ত বিষয়ে ফরিদ হোসেনের মাতা সফুরা বেগম বাদী হয়ে উক্ত শিবির সভাপতি হাসানুর রহমান ও জামায়াত নেতা আশরাফ সহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে তালা সহকারী পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করে। কিন্তু সুচতুর ওই আশরাফ ও সাংবাদিক নামধারী শিবির সভাপতি হাসান মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ও ফরিদকে সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে সে যাত্রায় পার পেয়ে যায়। বর্তমানে তারা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে পাটকেলঘাটার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (এসিল্যান্ড) খন্দকার রবিউল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উক্ত সম্পত্তি সরকারি (সওজ) এর হওয়ায় আমি ঘটনার কথা শুনে তাৎক্ষনিকভাবে আমার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে দিয়ে দখল যজ্ঞ বন্ধ করেছি এবং আমি আমার (ইউএনও) মহাদয় ও (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। আশাকরি খুব শীঘ্রই এই দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমন অবস্থায় এলাকার একটি সচেতন মহল এই প্রতারকচক্র, ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে জোর দাবী জানিয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)