সত্যিকারের মৎসকন্যার দেখা মেলে যে দ্বীপে

ছোটবেলায় শোনা রূপকথার গল্পগুলোর মধ্যে মৎস্যকন্যার গল্প অন্যতম। মৎস্যকন্যা শব্দটি শুনলেই কল্পনায় চলে আসে সমুদ্রের রহস্যময়ী কোনো এক সুন্দরী রমনীর চেহারা। তবে সে দেখতে অন্যান্য রমনীর মত নয়। তার মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত মানুষ এবং কোমরের নিচের অংশ দেখতে মাছের মত।

গল্প কাহিনীর এই চরিত্রটি মূলত কাল্পনিক হলেও বাস্তবেও কিন্তু রয়েছে এদের অস্তিত্ব। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে বাস বাস্তবের এই মৎস্যকন্যাদের। তবে তারা দেখতে রূপকথার মৎস্যকন্যাদের মত নয়, সাধারণ নারীদের মত। কি ভাবছেন মৎস্যকন্যাদের মত দেখতে না হলে তারা মৎস্যকন্যা কিভাবে? চলুন জেনে নেয়া যাক এই প্রশ্নের উত্তরটি।

জেজু দ্বীপে বসবাসকারী নারীদের মৎস্যকন্যা হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ এই দ্বীপের নারীরা সমুদ্রে ডুব দিয়ে ঝিনুক ও শঙ্খ সংগ্রহ করে। তারা পানির নিচে ঘন্টার পর ঘন্টা ডুবে থেকে কাজটি করে। এজন্যই তাদের হেনিয়ো বা সাগরকন্যা নামে ডাকা হয়।

সমুদ্রে ঘন্টার পর ঘন্টা ডুবে থেকে শঙ্খ, ঝিনুক, অক্টোপাস ইত্যাদি সংগ্রহ করাটা আসলে এদের নেশা নয়। এটি তাদের পেশা। নারীরা যেসব শঙ্খ এবং ঝিনুক সমুদ্র থেকে তুলে আনে পুরুষেরা সেগুলো বাজারে বিক্রি করে। এটাই তাদের আয়ের মাধ্যম। এই আয় দিয়েই চলে এখানকার মানুষদের সংসার।

বর্তমানে এই দ্বীপে যেসব নারীরা এসব সংগ্রহ করছে তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও তারা সমুদ্রের গভীরে অন্তত ৬০ ফুট গভীরে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটান। তবে অবাক করা ব্যাপার হল তারা পানির নিচে পুরোটা সময় কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডারের সহায়তা ছাড়াই কাটায়।

দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে এরা পানির গভীরে ২ মিনিটের বেশি সময় শ্বাস আটকে থাকতে পারে।

এভাবেই ঘন্টার পর ঘন্টা দিনের পর দিন সমুদ্রের নিচে শঙ্খ এবং ঝিনুকের খোঁজে সময় কাটান হেনিয়োরা।

জীবনযাপনের জন্য কতটা কষ্ট করা লাগতে পারে তার একটি উদাহরণ এই হেনিয়োরা।

সমুদ্রের তলদেশ পাথরে ভরপুর, রুক্ষ। হঠাৎ করেই সমুদ্রে আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটে। এসব কিছুকে উপেক্ষা করে এই কাজটি করাতে থাকে প্রাণ হারানোর ঝুঁকি। তবু তাদের এই কাজটি করতে হয়।

বর্তমানে হেনিয়োদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক নারী হল আল সুরা। তার বয়স ৯৫ বছর। এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসেও তিনিই সবচেয়ে বয়স্ক ডুবুরি।

সাধারণ ডুবুরিরা পানির নিচে দীর্ঘ সময় থাকার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে। কিন্তু রূপকথার মৎস্যকন্যারা কোনো অক্সিজেন ছাড়াই থাকতে পারে পানির নিচে। আর হেনিয়োরাও পানির নিচে থাকতে অক্সিজেন ব্যবহার না করায় এদের মৎস্যকন্যা বলাটা ভুল হবেনা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)