ফেনীর রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনের ফাঁসি
বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করতে চাইলে সাত কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টে আবেদন করতে বলেছেন বিচারক।
রায় ঘোষণার আগে সকাল ৯টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণে রাফির স্বজন, আসামিপক্ষের স্বজন, গণমাধ্যমকর্মী ও শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করেন। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।
র্যাব ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ১০টা ৫০ মিনিটে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ১১টায় বিচারক মো. মামুনুর রশিদ এজলাসে উপস্থিত হয়ে মামলার রায় পড়া শুরু করেন। ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের চুম্বক অংশ পাঠ করেন তিনি।
টানা ১৫ মিনিট রায়ের চুম্বক অংশ পাঠ করে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।
রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় থাকা আসামিরা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমরা নির্দোষ।’ প্রধান আসামি ও হত্যার নির্দেশদাতা সিরাজও তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রায় ঘোষণার সময় রাফি হত্যার ঘটনায় বিতর্কিত ভূমিকার জন্য সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে তিরস্কার করেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মানুষের সামনে আনার জন্য সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উচ্চ আদালতে যেন এ রায় বহাল থাকে, তেমন প্রস্তুতি নেব আমরা। মামলার রায়সহ কাগজপত্র এক সপ্তাহের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে পাঠানো হবে।
অন্যদিকে রায় প্রত্যাশিত হয়নি বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। নুসরাত হত্যা মামলার আসামি মো. শামীমের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম জানান, হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১২ আসামি জবানবন্দি দিলেও আদালত ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
তাছাড়া আসামিরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, রাষ্ট্রপক্ষ তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি তার মক্কেল মো. শামীমের পক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।
ফেনী জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ জানান, ৩০ মে বৃহস্পতিবার ফেনীর আমলি আদালতের বিচারক জাকির হোসাইন নুসরাত হত্যা মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পর ৪৮ কর্মদিবস পর্যন্ত এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়।
৬১ কর্মদিবসের দিন আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। ২৭ জুন মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
এ মামলার ৯২ সাক্ষীর মধ্যে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার, বাবা একেএম মুসা ও ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হানসহ ৮৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এ রায়ে খুশি হয়েছি। এ মামলায় ন্যায়বিচার পেয়েছে বাদীপক্ষ।
দণ্ডিত ১৬ আসামির মধ্যে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন হত্যাকাণ্ডের হুকুমদাতা। তিনি জামায়াতের রুকন ছিলেন।
এ ছাড়া মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি ও সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন এবং সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রাফির তিন সহপাঠী- কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা ও শিবির কর্মী জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। তারা একই সঙ্গে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
রাফির গায়ে আগুন দেয়ার পর তারা ফের স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পরীক্ষার হলে বসেছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- যুবদল কর্মী নূর উদ্দিন, সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, শিবির কর্মী সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জামায়াত কর্মী হাফেজ আবদুল কাদের, মাদ্রাসার শিক্ষক ও জামায়াত নেতা আবছার উদ্দিন, শিবির কর্মী আবদুর রহিম শরীফ, শিবির কর্মী ইফতেখার উদ্দিন রানা, শিবির কর্মী ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, শিবির কর্মী মোহাম্মদ শামীম ও শিবির কর্মী মহিউদ্দিন শাকিল।
রায় ঘোষণার সংবাদ শুনে কোর্ট চত্বরে আসামির স্বজনরা আহাজারি শুরু করেন। আদালত প্রাঙ্গণে হত্যা মামলার আসামি হাফেজ আবদুল কাদেরের বাবা আবুল কাশেম খান, জাবেদ হোসেনের ভাই জাহেদ হোসেন, নুর উদ্দিনের মা রাহেলা বেগম, আবদুর রহিম শরীফের মা নুর নাহার ও ইফতেখার উদ্দিন রানার বাবা জামাল উদ্দিন প্রকাশ্যে এ রায়ের বিরোধিতা করেন। তারা নুসরাত হত্যা মামলাটি মিথ্যা ও তাদের সন্তানদের বিনা দোষে ফাঁসির রায় দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। এ সময় স্বজনা উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে থাকেন।
রায় ঘোষণার পর সন্তুষ্টি জানিয়ে রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারে তিন যুগেরও বেশি সময় লেগেছিল, সেখানে নুসরাত খুব ভাগ্যবতী। মাত্র ৬১ কর্মদিবসে ও ঘটনার ৬ মাসের মধ্যে তার হত্যা মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকালে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রায়ের দিন-তারিখ ঘোষণা করেন।
রাফি হত্যা মামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ও পিবিআই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে।
সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় নুর হোসেন, আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল ও আরিফুল ইসলামের নাম অভিযোগপত্রে রাখেনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রাফি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর এখন নিয়মানুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের রায় (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে আসার কথা রয়েছে। এরপর আসামিদের মধ্যে যারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে চান তদের আপিল দায়েরের পর পেপারবুক তৈরি করে শুনানির প্রস্তুতি নেবেন আইনজীবীরা।
রায়ের শেষাংশে বলা হয়েছে, রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা চাইলে বা ইচ্ছা করলে সাত কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করতে পারবেন।
রায়ে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারায় ‘মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের’ জন্য মহামান্য হাইকোর্টে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হল। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়ের অনুলিপি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেল সুপার, ফেনী বরাবর পাঠানোর জন্য রায়ে বলা হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল যা বললেন : এদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, বিচারকাজ এরকমই হওয়া উচিত। অল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের যুগান্তকারী ও গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর রায় হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, এটা আমাদের বিচার বিভাগের জন্য বিরাট সার্থকতা এবং একটি মাইলফলক। বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ দফতরে সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া জানান।
মাহবুবে আলম বলেন, আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি এই জন্য যে, বিচারকাজটি ত্বরিতগতিতে সম্পন্ন হয়েছে। সব বিচারকাজ যদি এরকম ত্বরিতগতিতে সম্পন্ন হয়, বিশেষ করে, খুনের মামলাগুলো, তাহলে অন্ততপক্ষে জনগণ বিচার পাবে।
তিনি বলেন, গতকাল আমি একটি টেলিভিশনে দেখলাম, নুসরাতের পড়ার টেবিলের ওপর লেখা… এ ধরনের মেধাবী ছাত্রী, একদম নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের একটি মেয়েকে এভাবে হত্যা করার যে পৈশাচিকতা, এটা মেনে নেয়া যায় না।
এর সুষ্ঠু বিচার যদি না হতো তাহলে সমাজের কাছে এই মেসেজটা যেত না যে, খুন-রাহাজানি করলে কেউ পার পায় না। এটাই এ মামলার রায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মাহবুবে আলম বলেন, নিম্ন আদালত রায় দিয়েছেন। এটা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে উচ্চ আদালতে। এ মামলায় কতজনের ফাঁসি বহাল থাকবে, তা নির্ধারিত হবে হাইকোর্ট বিভাগ যখন ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি করবেন।
তিনি বলেন, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে।
রায় ঘোষণার পর আসামিদের চ্যাঁচামেচি : আদালতের এজলাসে রায় শোনার পর আসামিরা চিৎকার-চ্যাঁচামেচি শুরু করেন। কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করেন। কেউ কেউ জানান উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তারা।
আসামিরা এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী ও সাংবাদ কর্মীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন।
রায় ঘোষণার পর আসামিদের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় মাদ্রাসার শিক্ষক আবছার উদ্দিন চিৎকার করে বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমাদের ফাঁসানো হয়েছে।
আসামি নুর উদ্দিন চিৎকার করে বলেন, আমরা সঠিক বিচার পাইনি। আমরা এ রায় মানতে পারি না। সাংবাদিক ও কিছু আইনজীবীর কারণে আমাদের বিরুদ্ধে এমন রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন প্রিজন ভ্যান থেকে বলেন, আমি নির্দোষ। আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পেয়ে আমি বেরিয়ে আসব।
ওসি মোয়াজ্জেমের বিতর্কিত ভূমিকা : রাফি হত্যার ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে তিরস্কার করেছেন আদালত।
রাফি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় তৎকালীন ওসি গাফিলতি করেছেন। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর না ঘটে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেন আদালত।
প্রসঙ্গত গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন।
তবে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রাফিকে হয়রানি করেন। থানায় নুসরাতের কথাবার্তা তিনি ভিডিও করেন। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তৎকালীন ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ উঠলে প্রথমে তাকে বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে আছেন।
মোয়াজ্জেম অভিযুক্ত হলে রায় পূর্ণতা পেত : রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
বৃহস্পতিবার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জনের ফাঁসির রায় হয়েছে। আমি বলতে চাই, প্রাথমিকভাবে এটা ‘কমপ্লিট জাজমেন্ট’। তবে, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে যদি এ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হতো, আমি মনে করি, তাহলে এটা পূর্ণতা পেত।
তারপরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম জেলে আছেন, তার বিচার শেষ পর্যায়ে। তার সাজা যদি কনফার্ম করা হয়, ন্যায়বিচারের মাধ্যমে যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে রাফির আত্মা পরিপূর্ণভাবে শান্তি পাবে।
রাফিদের বাড়িতে নিরাপত্তা জোরদার : রায়কে ঘিরে বুধবার রাত থেকে রাফিদের বাড়ির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ির প্রহরায় নিয়োজিত আগের তিনজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আরও ৯ সদস্যকে যুক্ত করা হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত লোকজনও রেজিস্টারে স্বাক্ষর না করে ওই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছেন না।
গত ৭ এপ্রিল থেকে বাড়িটিতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়। এদিকে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে জেলা সদর ও সোনাগাজীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও টহল দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর ১ এপ্রিল ও ৩ এপ্রিল তার অনুগত ছাত্ররা তার সঙ্গে দেখা করতে যায়।
অধ্যক্ষ সিরাজ তাদের নির্দেশ দেন- মামলা তুলে নিতে রাফিকে যেন হুমকি দেয়া হয়। হুমকিতে কাজ না হলে তাকে হত্যার নির্দেশ দেন তিনি। এ কাজে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন ও মাকসুদ তাদের সাহায্য করবে বলেও তিনি জানান।
পরে পরিকল্পনা করে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা রাফির শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রাফি।
এর আগে বিভিন্ন সময় আদালতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মণি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।