প্রথম ‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস’ পেলেন যারা

অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস (বিবিএফএ)’-এর প্রথম আসর। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী মিলনায়তনে শুরু হয় দুই বাংলার চলচ্চিত্রের এ অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান। ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ও বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে এ পুরস্কার অনুষ্ঠানটি নিবেদন করেছে টিএম ফিল্মস। 

দুই বাংলার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের এ মহাসম্মেলনের মাধ্যমে কাজের স্বীকৃতি জানানো হয় চলচ্চিত্রজনদের। অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় বাংলাদেশের গুণী অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগম ও পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিককে।

আজীবন সম্মাননা পাওয়ার পর আনোয়ারা বেগম বলেন, এ ধরণের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। দুই বাংলা মিলিয়ে এতো এতো তারকা থাকতে আমাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হবে এটা আমি কখনো ভাবিনি। সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা।

রঞ্জিত মল্লিক বলেন, বাইশ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাদের এ আয়োজন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আয়োজন যেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে। যৌথভাবে সিনেমা নির্মাণের যে প্রয়াস চলছে, তা যেন আরো বেগবান হয়। আরেকটা কথা না বললেই নয়, আমি পৃথিবীর বহু দেশে ঘুরেছি, কিন্তু বাংলাদেশে আসলে যে আতিথেয়তা পাই তা পৃথিবীর আর কোথাও পাই না।

এদিকে ‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস’-এ সেরা চলচ্চিত্রে পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের ‘দেবী’ ও ভারতের ‘নগর কীর্তন’। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার পায় বাংলাদেশের ‌‘পাসওয়ার্ড’ ও ভারতের ‘বোমকেশ গোত্র’।

জনপ্রিয় নায়িকা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পান ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও বাংলাদেশের জয়া আহসান। সেরা প্রধান চরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের জয়া আহসান ও ভারতের পাওলি দাম। সিনেমার প্রধান চরিত্রের জন্য সেরা অভিনেতা হয়েছেন বাংলাদেশের সিয়াম ও ভারতের প্রসেনজিৎ। পপুলার অ্যাকটর অব দ্য ইয়ার হয়েছেন বাংলাদেশের শাকিব খান ও ভারতের জিৎ। শ্রেষ্ঠ পরিচালক হয়েছেন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও ভারতের সৃজিত মুখার্জি।

অনুষ্ঠানে সেরা স্ক্রিপ্ট রাইটারের পুরস্কারে পান বাংলাদেশের ফেরারী ফরহাদ ও ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সেরা সিনেমাটোগ্রাফারের পুরস্কার পান বাংলাদেশের কামরুল হাসান খসরু ও ভারতের সৃজিত মুখার্জি। ভিডিও এডিটর হিসেবে বাংলাদেশের তৌহিদ হোসেন চৌধুরী ও ভারতের সংলাপ ভৌমিক।

সেরা মিউজিক ডিরেক্টর বাংলাদেশের হৃদয় খান ও ভারতের বিক্রম ঘোষ। সেরা প্লে-ব্যাক গায়ক ইমরান মাহমুদুল ও ভারতের অনির্বান ভট্টাচার্য। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা বাংলাদেশের যৌথভাবে সোমনুর মনির কোনাল ও ফাতেমাতুজ জোহরা ঐশী ও ভারতের নিকিতা নন্দী।

সেরা পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতা বাংলাদেশের ইমন ও ভারতের অর্জুন চক্রবর্তী। সেরা পার্শ্ব চরিত্র অভিনেত্রী বাংলাদেশের জাকিয়া বারী মম ও ভারতে সুদীপ্তা চক্রবর্তী। বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশের তাসকিন রহমান ও বিদ্যা সিনহা মীম এবং ভারতের রুদ্র নীল রায় ঘোষ ও আবীর চ্যাটার্জি ও নবনী।

পুরস্কার দেয়ার আগে নবরাত্রী মিলনায়তনে দুই বাংলার তারার মেলা বসেছিল। একে একে হাজির হতে থাকেন সব জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। পশ্চিমবঙ্গের তারকা প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণা, জিৎ,আবির চ্যাটার্জি, তনুশ্রী দত্ত, পরমব্রত, পাওলি দাম এবং বাংলাদেশ থেকে মৌসুমী, ওমর সানি, জয়া আহসান, বিদ্যা সিনহা মিম, নুসরাত ফারিয়া, পরীমনি, ইমন, নিরব, তাসকিন, সিয়াম, পূজা চেরিসহ অনেক তারকা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে টিএম ফিল্মসের চেয়ারপারসন ফারজানা মুন্নী বলেন, দুই বাংলার সেরা শিল্পীদের সম্মান জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। দুই বাংলায় চলচ্চিত্রে এখন সংকট চলছে, ঠিক এই সময়ে চলচ্চিত্রের পথে পা বাড়িয়েছে আমাদের টিএম ফিল্মস। নতুন সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার প্রয়াসে আমরা প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বপ্ন দেখছি দেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দেয়ার।

বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী  ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা একই ভাষায় কথা বলি। আমরা একই পাখির কলতান শুনি। কিন্তু রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদেরকে বিভক্ত করেছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং জলবায়ুও এক। আমাদের মধ্যে এ ধরনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান নিশ্চয় আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ করবে। চলচ্চিত্র জীবনের কথা বলে, মানুষকে কাঁদায়, হাসায়, চলচ্চিত্র চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়। আমার বিশ্বাস, এ আয়োজনের মধ্যদিয়ে আমাদের সম্পর্ক নতুন এক মাত্রায় পৌঁছাবে।

কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, সিনেমার যে সময় সেটা আশ্চার্য ম্যাজিক। যেটা এক হাজার বছরের গল্প মাত্র দু’বছরে বলা যায়। আবার পাঁচ মিনিটের গল্প দুই ঘণ্টায় বলা যায়। সিনেমায় আমরা সময়কে সংকুচিত করতে পারি। আবার প্রসারিত করতে পারি। এক আশ্চার্যজনক মাধ্যমে আমরা কাজ করি। সিনেমা কি সত্যি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে প্রীতি ও মিলন বয়ে আনতে পেরেছে? এটা নিয়ে একটা লেখা আরও আগেই লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের কারণে হয়ে ওঠেনি। সিনেমা আমাদের একত্রিত করে দিবে, মানুষের মধ্যে আর কোনো বিভেদ থাকবে না। সিনেমা যে কাজটা করতে পারে সেটা হলো আমাদের স্মৃতিমালাকে একত্রিত করতে পারে। আর সেই প্রত্যাশাই রইলো।

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার দারুণ এক সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। আমাদের দুই বাংলার ইতিহাস ও সম্প্রীতি এ আয়োজনের মাধ্যমে আরো দৃঢ় হবে। এই ঢাকা শহরে ১৯৬৫ সালে প্রথম চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন হয়েছিল। যেখানে সত্যজিৎ রায় উপস্থিত ছিলেন। যা আবারো এই শহরেই তেমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। এটা বেশ আনন্দের। দুই বাংলার সংস্কৃতিতে একটা সময় অস্থিরতা ছিল। কিন্তু সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূর হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে তা আরো দৃঢ হবে। সিনেমা তো শিল্প, একে চর্চা করতে হয়। এছাড়া তো একে আর সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কেন পথ নেই। আগে কিন্তু একটা সময় ছিলো, ভালো কাজ হলে দুই বাংলাতেই টের পাওয়া যেত। কিন্তু এখন অর সেটা হয় না। এক ধরনের ভালো কাজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্যে রাখেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ফিরদাউসুল হাসান ও বিবিএফএ এর সমন্বয়ক তপন রায়।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার জুরি বোর্ডের সদস্যরা। বাংলাদেশের আলমগীর, কবরী, ইমদাদুল হক মিলন, খোরশেদ আলম খসরু ও হাসিবুর রেজা কল্লোল ছিলেন জুরি বোর্ডে। অন্যদিকে ভারত থেকে ছিলেন গৌতম ঘোষ, ব্রাত্য বসু, গৌতম ভট্টাচার্য, অঞ্জন বোস ও তনুশ্রী চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ভারতের জি-বাংলা ও বাংলাদেশের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে এটিএন বাংলা ও গানবাংলা টেলিভিশন। ইভেন্ট পার্টনার ওয়ান মোর জিরো। উপস্থাপনা করেছেন কলকাতার মীর আফসার আলী ও বাংলাদেশের শাহরিয়ার নাজিম জয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)