ছিলেন ৬ হাজার টাকার ভাড়া বাসায়, এখন ১০ কোটি টাকার নিজের বাসা রাজীবের
প্রায় ছয় বছর আগে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির একটি বাড়ির নিচতলার গ্যারেজের পাশেই ছোট্ট এক কক্ষে সস্ত্রীক ভাড়া থাকতেন শনিবার দিবাগত রাতে র্যাবের হাত গ্রেপ্তারকৃত ঢাকা উত্তর সিটির কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। ভাড়া দিতেন ছয় হাজার টাকা। তখনো তিনি কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন না। এখনো করেন না। কিন্তু ছয় বছরের মধ্যে একই হাউজিং এলাকায় তিনি তৈরি করেছেন রাজকীয় ডুপ্লেক্স বাড়ি। পরিবার নিয়ে নতুন এই বাড়িতে বিলাশবহুল জীবনযাপন করতেন তিনি।
রাজীবের বাড়ির এই জমি নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন বাড়ির মালিক জানান, রাজীব যেখানে বাড়িটি করেছেন, সেই জমির মালিক ছিলেন বারী চৌধুরী। এই জমির কিছু অংশে পানির পাম্প বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জমিটি কৌশলে নিজেই নিয়ে নেন কাউন্সিলর।
আগে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাজীব চলাফেরা করতেন। কিন্তু কাউন্সিলর হওয়ার পর কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়িতে চড়া শুরু করেন তিনি। নতুন নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ি কেনা হয়ে যায় তার নেশা। যেখানেই যেতেন তাঁর গাড়িবহরের সামনে-পেছনে থাকতো শতাধিক সহযোগীর একটি দল। এসব কারণে মোহাম্মদপুর এলাকায় তিনি যুবরাজ হিসেবে পরিচিত পান।
স্থানীয়রা জানান, গত চার বছরে রাজীব ৮-১০টি নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনেছেন। মার্সিডিস, বিএমডাব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডাব্লিউ স্পোর্টস কারসহ নামিদামি সব ব্র্যান্ডের গাড়িই এসেছে রাজীবের হাতে।
তারেকুজ্জামান রাজীব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ২০১৪ সালে কাউন্সিলর হওয়ার পরই যুবলীগের এই নেতার অবস্থা বদলে যেতে থাকে। এই কয়েক বছরে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে। জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, আজকে যখন এই কাউন্সিলরকে আটক করতে সমর্থ হই, তখন তার কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল এবং ৩ রাউন্ড গুলি ও বিদেশি কিছু মদ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব আলামত নিয়ে আমরা মোহাম্মদপুরে তার বাসা ও অফিসে তল্লাশি করেছি। তবে আমরা তেমন কিছু পাইনি। কারণ,আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যেসব ডকুমেন্ট ছিল, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে তারই একজন সহযোগীর আত্মীয়র বাড়ি থেকে চেক বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো চেক করে দেখলাম ব্রাক ব্যাংকের একটি একাউন্টে একদিনে তিনি ৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। আমরা এগুলো তদন্ত করে দেখছি কোথায় জমা দিয়েছেন, টাকাগুলো কোথায় গিয়েছে।