পাহাড়ে হাসছে জুমের সোনারং ধান

পাহাড়ে শোভা পাচ্ছে জুমের পাকা ধান। সূর্যের মিষ্টি রোদ যখন সেই ধানের ওপর পড়ে তখন মনে হয় সোনা ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ে। যখন মৃদুমন্দ বাতাসে বয়ে যায় তখন মনে হয় সোনালি ঢেউ খেলা করছে। মনোরম সেই দৃশ্য। পাকা ধানের গন্ধ ম ম করছে বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদগুলোতে। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ ধান কাটতে নেমেছে খেতে। ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখন জুমিয়া পরিবারগুলো। এদিকে ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ি পল্লিগুলোতে নবান্ন উত্সবের প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। এবছর জুমের আশানুরূপ ভালো ফলন হয়েছে দাবি জুমিয়াদের।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভবতোষ চক্রবর্তী বলেন, কয়েকবছর ধরে জেলায় প্রতিবছরই জুমের চাষ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ বছর জুমের ফসলের ভালো ফলন হয়েছে। জুমের ধানসহ অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জুমিয়া পরিবারগুলো। পাহাড়ের জুম চাষ থেকে জুমিয়ারা সারাবছরের খাদ্য সংরক্ষণ করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়িরা প্রতি বছর জেলার বিভিন্ন স্থানে শতশত পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে ঝাড়-জঙ্গল পুড়িয়ে আদিপদ্ধতিতে জুম চাষ করে। জুমিয়ারা পাহাড়ে ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, মরিচ, যব, সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, টকপাতা, ফুলসহ বিভিন্ন রকমের সবজি উত্পাদন করে। তবে একটি পাহাড়ে একাধিকবার জুম চাষ করা যায় না বলে জুমিয়ারা প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন পাহাড়ে জুমের চাষ করে।

জেলায় বসবাসরত ম্রো, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমী, লুসাই, চাকমা, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশরাই জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। জেলা শহরের বসবাসরত কিছু সংখ্যক শিক্ষিত পরিবার ছাড়া দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বসবাসরত পাহাড়িরা আজও জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একমাত্র ম্রো সম্প্রদায় আদিকাল থেকে এখনো পর্যন্ত জুম চাষের মাধ্যমেই সারাবছরের জীবিকা সংগ্রহ করে। জুমিয়া পরিবারগুলো প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন লাগান।

আর মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ আরম্ভ করেন। প্রায় তিন-চার মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা। বান্দরবানের রুমা, থানছি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং সদর উপজেলার ট্যুরিস্ট স্পট মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি-চিম্বুক সড়কের রাস্তার দুপাশের পাহাড়গুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে জুমখেতে উত্পাদিত ধানের সোনালি হাসি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)