ঢালিউডের ছবিতে বলিউড শিল্পী: এসেছিলেন, তবে
পাশের দেশের সিনে ইন্ডাস্ট্রি বলিউডের দিকে আমরা তাকিয়ে থাকি। এটা সত্যি, সিনেমা জগতের নিত্যনতুন ঝলকানি তারা দেখিয়েও থাকেন। আমাদের সিনে ইন্ডাস্ট্রি অর্থাৎ ঢালিউডের অনেক নির্মাতা-প্রযোজকই মনে করেন বলিউডের তারকাদের এনে ছবি করালেই হিট! এমনিতে বলিউডের সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দেয়া মোটেই সহজ কথা নয়। সব দিক থেকেই বলিউডের সঙ্গে ঢাকার সিনেমার পার্থক্য আকাশ-পাতাল।
মিঠুন চক্রবর্তী
বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল বাঙালির তালিকা করলে তিনি থাকবেন সবার ওপরের দিকে। এমনকি তার জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে, পড়াশোনাও করেছেন বরিশালের স্কুলে। ক্যারিয়ার শুরু করেছেন মুম্বাইতে। তাই বলিউডের শিল্পী হিসেবেই তাকে অভিহিত করা যায়। যদিও পরবর্তীতে কলকাতার ছবিতেই তার ব্যস্ততা ছিল বেশি।
মিঠুন যৌথ প্রযোজনার বাংলা ছবিতেও কাজ করেন। ১৯৮৫ সালে শক্তি সামন্তের পরিচালনায় ‘অন্যায় অবিচার’ ছবিতে তাকে দেখা গেছে ঢালিউডের রোজিনার বিপরীতে। আরও ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা উৎপল দত্ত। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পেয়েছিল। এ ছাড়া ২০১০ সালে মিঠুন চক্রবর্তী আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন বিলাতে’ ছবিতেও কাজ করেন। এটিও দর্শকনন্দিত হয়।
শক্তি কাপুর
ভিলেন, কমেডিয়ান কিংবা চরিত্রশিল্পী- বিভিন্ন রূপে শক্তি কাপুরকে বলিউডের ছবিতে দেখা গেছে। ১৯৯৫ সালে ফিল্মফেয়ারে সেরা কমেডিয়ানের পুরস্কার জয় করা শক্তি কাপুর ২০০০ সালে বাংলাদেশ এসে সাঈদুর রহমান সাঈদের পরিচালনায় ‘এরই নাম দোস্তি : টাইস নেবার ডাই’ ছবিতে কাজ করেন। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন রিয়াজ ও শাবনূর। এ ছবিটিও ব্যবসাসফল হয়েছিল। তবে সেটা শক্তি কাপুর নয়, শাবনূর-রিয়াজের জন্য। শক্তি ছিলেন উপলক্ষ মাত্র।
শরদ কাপুর
বলিউডে ‘জোশ’ সিনেমায় শাহরুখ খানের বিপরীতে ভিলেন হিসেবে ‘প্রকাশ’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শরদ কাপুর। সেবার ফিল্মফেয়ারে সেরা ভিলেন ক্যাটাগরিতে মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি। এরপর ‘লক্ষ্য’, ‘এলওসি কারগিল’, প্ল্যান কিংবা সর্বশেষ সালমান খানের সঙ্গে ‘জয় হো’ ছবিতে অভিনয় করেন। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে সোহানুর রহমান সোহান নির্মিত ‘স্বামী ছিনতাই’ ছবিতে শরদ কাপুরকে দেখা গেছে। প্রয়াত নায়ক মান্না ও মৌসুমী, মিশা সওদাগর ছাড়াও ছবিটিতে আরও ছিলেন কলকাতার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এ ছবিটিও ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। তাছাড়া মান্না ছিলেন তখন হিট নায়ক। তাই তার সুবাদে শরদও বাংলাদেশে পার পেয়ে যান।
চাঙ্কি পান্ডে
১৯৯৩ সাল অবধি বলিউডে বেশ দাপটের সঙ্গেই কাজ করেছেন চাঙ্কি পান্ডে। পাপ কি দুনিয়া, খাত্রো কি খিলাড়ি, জ্যাহিরিলা, রুপিয়া দাস কারো, বিশ্বমাতা, লুটেরা এবং আঁখে’র মতো ছবিতে অভিনয় করে লাইম লাইটে ছিলেন তিনি। যদিও এরপর খানদের আগমনের জের ধরে বাজার হারাতে শুরু করেন চাঙ্কি। জানা যায়, সাফল্য ও আর্থিক কারণে তিনি চলে আসেন ঢালিউডে। এখানে তার সবচেয়ে বড় ছবি ছিল ‘স্বামী কেন আসামি’।
মনোয়ার খোকন পরিচালিত এ ছবিতে আরও ছিলেন শাবানা, জসিম ও ঋতুপর্ণা। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। পরে তিনি ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’ নামের আরেকটি ঢাকাই ছবিতে কাজ করেন। ছবিগুলো ব্যবসায়িকভাবে খুব একটা খারাপ যায়নি।
জয়া বচ্চন
মূল পরিচয় তার তিনি বলিউড বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী। তিনি নিজেও বেশ ডাকসাইটে অভিনেত্রী। ঢাকায় তার অভিনীত ছবির নাম ‘মেহেরজান’। রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত এ ছবিটি ২০১১ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পায়। আর মুক্তির পরই এটি বিতর্কের ঝড় তোলে। জয়া বচ্চনের সঙ্গে সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ভিক্টর ব্যানার্জি। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের শায়না আমিন, হুমায়ুন ফরীদি, খায়রুল আলম সবুজ ও আজাদ আবুল কালাম। ছবিটি ব্যবসায়িক সফলতা না পেলেও জয়ার অভিনয় প্রশংসিত হয় তখন।
শাবানা আজমী
বলিউডের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা আজমী। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। ২০০১ সালে তিনি কাজ করেন ঢালিউডের ছবিতে। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে নির্মিত এ ছবির নাম ‘মেঘলা আকাশ’। নার্গিস আক্তারের পরিচালনায় এইডস প্রতিরোধবিষয়ক গল্প নিয়ে নির্মিত এ ছবিতে আরও ছিলেন মৌসুমী, শাকিল খান, পূর্ণিমা, অমিত হাসান, রাজীব, শহিদুল আলম সাচ্চু, ফেরদৌসী মজুমদার ও পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবিটি ব্যবসায়িক সফলতা পায়নি।
ভাগ্যশ্রী
বলিউডে ১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবিতে অভিষেকেই বাজিমাৎ করেছিলেন তিনি। সালমান খানের বিপরীতে অভিনয় করে পেয়ে যান নবাগত অভিনেত্রীর ক্যাটাগরিতে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। বলিউডে এটাই ভাগ্যশ্রীর প্রথম এবং শেষ সাফল্য। ২০০২ সালে ঢালিউডের ‘শত্রু ধ্বংস’ ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে দেখা যায় তাকে। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত এ ছবিতে আরও ছিলেন নূতন, ইলিয়াস কাঞ্চন, শাকিল খান, গোলাম মুস্তাফা, আনোয়ার হোসেন, আহমেদ শরীফ ও নাছির খান। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে খুব বেশি সফলতা পায়নি।
স্নেহা উল্লাল
সালমান খানের সঙ্গে ‘লাকি’ ছবি দিয়েই তার বলিউডে আত্মপ্রকাশ। কিন্তু সফলতা তাকে কখনই ধরা দেয়নি। চেষ্টা নেহাতই কম করেননি। বাংলাদেশি ছবিতেও দেখা গেছে বলিউডের স্নেহা উল্লালকে। তবে আইটেম গার্ল হিসেবে। অনন্ত জলিলের ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবিতে একটি আইটেম গানে তার উপস্থিতি ছিল। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে বেশ সফল হয়েছিল।
আশীষ বিদ্যার্থী
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এ অভিনেতার মা ছিলেন বাঙালি বংশোদ্ভূত, নাম রেবা বিদ্যার্থী। হিন্দি, তামিল, কন্নড়, মালায়লাম, তেলেগু, মারাঠি, পাঞ্জাবি কিংবা বাংলা- ভারতবর্ষে এমন কোনো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নেই যেখানে আশীষ বিদ্যার্থী কাজ করেননি। ঢালিউডেও কাজ করেছেন তিনি। একটা নয়, তিনটি ছবিতে। যদিও ‘অগ্নি-২’, ‘অঙ্গার’ কিংবা ‘হিরো-৪২০’ সবগুলোই ছিল যৌথ প্রযোজনার ছবি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ক্যাপ্টেন খান ছবিতে শাকিব খানের সঙ্গে দেখা গেছে। সব ছবিই ব্যবসায়িক হিসাবে গড় তালিকায় ছিল।