চেঙ্গিস খানের সমাধিতে কী রয়েছে, জেনে নিন

ইতিহাসে তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি। জন্মসূত্রে তার নাম ছিল তেমুজিন। তিনি মঙ্গোল গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে এই সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে অনাবিষ্কৃত হাজারো রহস্য রয়েছে এখনো প্রতীয়মান। যার কোনো কূলকিনারা পাওয়া সম্ভব হয়নি আজও। এরকম হাজারো রহস্যের মধ্যে অন্যতম একটি রহস্যপূর্ণ ব্যপার হলো, চেঙ্গিস খানের সমাধি। যার কোনো হদিসই মিলেনি আজও।

এটা কি কেবলই একটি সমাধি? না! যেনতেন সমাধি নয়। যেনতেন সমাধি হলে তো আর এত রহস্যের কিছু হতো না, এত খোঁজাখুঁজি কিংবা গবেষণাও হতো না। কিন্তু কেন তাহলে এত কিছু এই সমাধি নিয়ে? কী আছে এই সমাধিতে? সবই জানানোর চেষ্টা করব, তবে তার আগে আমাদের জানা দরকার, কে ছিলেন এই চেঙ্গিস খান? কেন তার সমাধি ঘিরে এত রহস্য!

চেঙ্গিস খান ১২২৭ সালে মারা যান। মৃত্যুর পর আরেক উপাখ্যান শুরু হয়। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার সমাধি হয় মঙ্গোলিয়ার কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে। ঘোড়ায় চড়ে বিশ্ব জয় করেছিলেন ভয়ংকর যোদ্ধা চেঙ্গিস খান। মঙ্গোলীয় সাম্রাজ্যের এই প্রতিষ্ঠাতার ইতিহাস অপহরণ, রক্তপাত, ভালোবাসা ও প্রতিশোধে পরিপূর্ণ।

চেঙ্গিস খান ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন। সাম্রাজ্য বাড়াতে গিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন তিনি। তার সাম্রাজ্য প্রায় দেড় শতক টিকে ছিল। চেঙ্গিস খানের কবর নিয়ে হাজার বছর ধরে গবেষণা করে আসছে বিজ্ঞানীরা। সেই সঙ্গে মানুষের মনে রয়েছে কৌতুহল।

বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, চায়না অথবা মঙ্গোলিয়াতে তার কবর আছে বলে সন্দেহ করা হলেও এর সত্যতা আজও পাওয়া যায়নি। বলা হয় চেঙ্গিস খানের সমাধির সব চিহ্ন মুছে দিয়েছে সেনারা। এ জন্য তারা সমাধির ওপর দিয়ে এক হাজার ঘোড়া চালিয়ে দেয়।

ঐতিহাসিকদের বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞরা চেঙ্গিস খানের সমাধি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। মজার বিষয় হলো, চেঙ্গিস খানের সমাধি খোঁজার আগ্রহে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশিদের যুক্ত থাকতে দেখা গেছে। মঙ্গোলিয়ানদের মধ্যে চেঙ্গিস খানের সমাধি খোঁজার আগ্রহ দেখা যায়নি। তার সমাধি খুঁজতে চায় না মঙ্গোলিয়ানরা।

চেঙ্গিস খানের সমাধি খোঁজার ক্ষেত্রে মঙ্গোলিয়ানদের অনাগ্রহের কারণে কারও কাছে মনে হতে পারে, এই বীর যোদ্ধা বুঝি তার নিজ ভূমে গুরুত্বহীন। বিষয়টা আসলে তেমন নয়, বরং উল্টোই। এই যেমন মঙ্গোলিয়ার মুদ্রায় পর্যন্ত তার মুখচ্ছবি আছে। ভোদকায়ও মেলে চেঙ্গিস খান। মঙ্গোলিয়ায় তার জনপ্রিয়তা বিপুল।

মঙ্গোলিয়ানদের অনাগ্রহের বিষয়টিকে বিদেশি গণমাধ্যম ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে। তারা একে একটি ‘অভিশাপ’ হিসেবে বর্ণনা করে। তারা বলে, অভিশাপের ভয়ে মঙ্গোলিয়ানরা চেঙ্গিস খানের সমাধি খোঁজে না। এমন বিশ্বাসের কথাও বলা হয় যে, চেঙ্গিস খানের সমাধি আবিষ্কৃত হলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এই ভয় থেকেই মঙ্গোলিয়ানরা তার সমাধি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে না।

রাশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ডিগ্রি নেয়া এক তরুণ মঙ্গোলিয়ান এই রহস্যের ব্যাখ্যা দিলেন। তার ভাষ্য, চেঙ্গিস খানের সমাধি না খোঁজের পেছনে মঙ্গোলিয়ানদের মধ্যে কোনো কুসংস্কার নেই। আছে শ্রদ্ধার বিষয়টি। চেঙ্গিস খানই চেয়েছিলেন, তার সমাধি অজ্ঞাত থাকুক। তার এই ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই মঙ্গোলিয়ানরা সমাধি খুঁজতে যায় না। এখন এটা খুঁজতে গেলে তাকে অসম্মান করা হবে বলে তারা মনে করে।

কিন্তু কী আছে এই সমাধিতে? 

পৃথিবীর অনেক মানুষই বিশ্বাস করে চেঙ্গিস খানের সমাধিতে আছে অমূল্য রত্নভাণ্ডার! এক কবর নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে হাজার হাজার জীবনাবসান, ওদিকে আবার মঙ্গোলীয়রাও চায় না যে এই কবরের রহস্য উন্মোচিত হোক। তবু চলছে খোঁজাখুঁজি কিন্তু কেন? তাহলে কি সেই ধারণাই ঠিক?

ইতিহাসবীদদের কেউ কেউ যে বলছেন, চেঙ্গিস খানের সমাধি নাকি সমগ্র পৃথিবীর অর্ধেক ধনসম্পদে ঠাঁসা এক রত্নভাণ্ডার!তবে যাইহোক, এতটুকু স্পষ্ট, চেঙ্গিস খান সারা জীবনে যে পরিমাণে ধন-সম্পদ লুট করেছেন তার সবই রেখে দেয়া হয়েছে এই সমাধিতে। বিজিত ৭৮ জন রাজার মুকুটই নাকি সেখানে রাখা আছে বলে ধারণা করা হয়।

এছাড়া সর্বশেষ যতদূর জানা যায়, ১৯৯০ সালে মঙ্গোলীয়ার রাজধানীতে অবস্থিত উলানবাটার স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. দিমাজাব আরডেনেবাটারি একটি উদ্যোগ নেন। জাপানের সঙ্গে যৌথ এ উদ্যোগের নাম ছিল ‘তিন নদী প্রকল্প’। কিন্তু সেটিও ব্যার্থ হয়ে যায়। খুঁজে পাওয়া যায়নি রহস্যজনক এই কবর। অস্পৃশ্যই রয়ে গেছে বিশাল এই রত্নভাণ্ডার!

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)